লক্ষ্মীপুরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক দুরবস্থা চলছে। অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদ-পদবি দেওয়া, যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সম্মেলন না করা ইত্যাদি কারণে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা আছে।
অন্যদিকে প্রায় ১০ মাস ধরে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির কমিটি নেই। নেতৃত্বের লড়াইয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। ঘরোয়াভাবে চলছে দলীয় কর্মকান্ড। দলীয় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনও জমাতে পারেনি সংগঠনটি। বিএনপি অধ্যুষিত এ জেলায় এখন দলটির যেন গতি নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে শীর্ষ এক নেতাসহ বেশ কয়েকজন রাজাকারের সন্তান বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক নেতার বিরুদ্ধে পদ-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অজুহাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিলাসী জীবনযাপনের কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব নেতা দেশ ও দেশের বাইরে বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন ও কোটি টাকার দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন। জেলায় দলের স্থায়ী কোনো কার্যালয় না থাকলেও দুই শীর্ষ নেতার পৃথক ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন হচ্ছে ঘরোয়া পরিসরে। জেলা কমিটিও এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। ৬ মার্চের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকলেও কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই জেলা কমিটির। দীর্ঘ ১৭ বছর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্মেলন হয়নি। গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে সম্প্রতি সদর উপজেলাকে সাংগঠনিকভাবে দুই ভাগে (পূর্ব ও পশ্চিম) বিভক্ত করে দুটি কমিটি গঠন করে জেলা কমিটি। পশ্চিম শাখার সভাপতি পদে জেলা সাধারণ সম্পাদকের ভাগ্নে হুমায়ুন কবির পাটোয়ারীকে নির্বাচিত করা হয়। এ নেতার বাবা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত বলে অভিযোগ আছে। একই অভিযোগ জেলা সাধারণ সম্পাদকের বাবা ও তার ভগ্নিপতি রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদের বাবার বিরুদ্ধেও। রায়পুর থানা আওয়ামী লীগে ১৭ বছর আগে সম্মেলন হয়েছে এ উপজেলায়। কমিটির সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনসহ ১৮ জন নেতা মারা গেছেন। পরে স্বজনপ্রীতিতে মামুনুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানানো হয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন পৌর মেয়র ও জেলার সাধারণ সম্পাদকের ফুফাশ্বশুর। এখানে সাংগঠনিক কাজে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।রায়পুর পৌর কমিটিরও সম্মেলন হচ্ছে না ২২ বছর ধরে। একই অবস্থা রামগতি ও কমলনগর উপজেলা, সব পৌরশহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির। রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদও রাজাকারের সন্তান হিসেবে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্যে এ জেলায় ত্যাগীরা বঞ্চিত হচ্ছে। পদ-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির টাকায় জেলা সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতা কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তারা বিলাসী জীবনযাপন করছেন এখন। লক্ষ্মীপুর বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হতাশায় রয়েছেন। অনেকে দল ছাড়ছেন, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। গত বছরের ৯ এপ্রিল কেন্দ্র থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটি বাতিল করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি করার কথা। কিন্তু প্রায় ১০ মাসেও তা করা হয়নি। কর্মীদের মতে, বিএনপির দুই গ্রুপের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক জেলা সভাপতি খায়ের ভূঁইয়া ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। অন্য গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুর রহমান। তবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু জানান, আমাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চলছে। আগামীর জেলা কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে। ত্যাগীরাই কমিটিতে স্থান পাবেন।