বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

হলুদ বিহার এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

নওগাঁ প্রতিনিধি

হলুদ বিহার এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

নওগাঁয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদ বিহার। ঐতিহাসিক হলুদ বিহার এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে বিহারের চতুর্দিকে ভেঙে পড়ছে। এতে বিলুপ্ত হতে চলেছে ইতিহাস ঐতিহ্যের  নিদর্শনটি। প্রাচীন এ বিহারটির ওপর কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো নজর নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এটি জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত। শিক্ষা সফরে দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যটকরা আসেন এখানে। বিহারটিকে সংস্কার করে এর ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার দাবি এলাকাবাসীর।

 জানা যায়, বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের হলুদ বিহার গ্রামের এক প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই দ্বীপ। ইতিহাস ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এই দ্বীপে নজর পড়লেই দর্শকরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আসলে এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ ছিল। এক সময় গাছ গাছড়া ঝোপ-জঙ্গলে পরিপূর্ণ উঁচু একটি দ্বীপ। দ্বীপের মাথায় ছিল একটি বরই গাছ। যার নিচে ছিল একটি গভীর কূপ। দ্বীপের ঝোপ-জঙ্গল গাছপালা কেটে ফেলার আগেই কূপটি ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে দ্বীপটি সংস্কারকালে এ কূপের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 আশপাশের লোকজন দ্বীপের চতুর ধারে মাটি কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেন। মাটি কাটার একপর্যায়ে দ্বীপের পূর্ব দিকে ইটের সিঁড়ি বের হয়। তখন এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তারপরেই এ দ্বীপটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে নেওয়া হয়। হলুদ বিহার গ্রামে ছিল অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত ঢিপি তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল পুরনো ইট, ভাঙা মৃৎশিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন। এ থেকেই এখানে বৌদ্ধ বসতির প্রমাণ মেলে। ১৯৭৬ সালে দ্বীপটি সংরক্ষিত করা হয়। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রথম বারের মতো খনন কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে ২য় বার খননকালে দ্বীপের অভ্যন্তরে একটি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। এটি খননকালে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন সামগ্রী মানুষের মূর্তি সংবলিত ভাঙা, পোড়া মাটির ফলক, পাথর সামগ্রী ও মূর্তির স্তম্ভ মূল অলংকারের ঢালাই ছাচ এবং চূর্ণ যন্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রশাসনিক উদাসীনতা ও সংরক্ষণের অভাবে প্রাচীনতম এ নিদর্শন আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। হলুদবিহার গ্রামের শাহিনুর ইসলাম, রোস্তম আলী, বলরামপুর গ্রামের নাজমুল হকসহ অনেকে জানান, বিহারটির চতুরদিকে দ্রুত বাউন্ডারি, সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়াসহ সংস্কার ও সংরক্ষণের প্রয়োজন। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাস্টডিয়ান আবু সাঈদ ইনাম তানভিরুল জানান, বিহারটি নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে আরও খননের প্রয়োজন। চতুর্দিকে তারকাঁটা দিয়ে ঘিরতে হবে। যাতে করে বিহারটি সাধারণ লোকজন দেখতে পায়। এ ছাড়াও বিহারটির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। বিহারটি দেখাশোনার জন্য আবু বক্কর নামে এক কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর