রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

তৃণমূলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে রেজাউল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

তৃণমূলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে রেজাউল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের জোর তৎপরতা চলছে। এরই মধ্যে তৃণমূলকে চাঙা করতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। বসে নেই বিএনপিও। এ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মূলত দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।

দফায় দফায় বৈঠক রেজাউলের : ‘জয়লাভের জন্য তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই নির্বাচনে এনে দেন উৎসবের আমেজ। তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারলে যে কোনো প্রার্থীর ভরাডুবি হতে পারে’- এ উপলব্ধি থেকে গতকাল সকাল-বিকাল দুই দফা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় প্রান্তিক পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে তিনি নির্বাচনী কৌশল ও বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বৈঠকগুলোতে ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল ১০টার দিকে চান্দগাঁও ও বাকলিয়া থানার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিজ বাড়িতে মতবিনিময় করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। দুপুরে তিনি চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরীর কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারের দেওয়া মেজবানি ও দোয়া-মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। বিকালে ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তাদের বিভিন্ন নির্বাচনী পরিকল্পনা তুলে ধরেন। পরে আলোচনার ভিত্তিতে এর আলোকে করণীয় ও কৌশল নির্ধারণ করেন। পরে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, ভোট সংগ্রহ এবং ভোটকেন্দ্রে যে কোনো অনিয়ম ও কারচুপি ঠেকাতে ওয়ার্ড পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অবস্থান শক্ত না হলে ভোট কেন্দ্রে বিপর্যয় ঘটতে পারে। মূলত ভোট কেন্দ্র পাহারা দেন স্থানীয় কর্মীরাই। মূলত  নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই ভোটকে উৎসবে রূপ দেন।

পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রেজাউল ভাই (রেজাউল করিম চৌধুরী) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সজ্জন মানুষ। তার রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য ও দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ তাকে বিপুল ভোটে জয়লাভে সহযোগিতা করবে। তার পরও গোড়ার (তৃণমূলের) ভোটার-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে প্রার্থী এবং কর্মীদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হতে পারে, তাই আমরা মতবিনিময় সভা করেছি।

বিএনপি প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জ্বালাও পোড়াও মামলাকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে ‘কে কয়টা মামলার আসামি ও কতবার কারাবরণ করেছেন’ তা তুলে ধরেই কাউন্সিলর পদে দলীয় টিকিট নিশ্চিত করতে যুক্তি উপস্থাপন করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উল্লেখযোগ্য অংশ মামলার আসামি হওয়ায় এবং মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হওয়ার শঙ্কার কারণে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একাধিক বিকল্প প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপির হাই কমান্ড। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘দলের এ দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিল, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ রকম কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে কারাভোগ করেছেন এমন নেতাদের কাউন্সিলর পদে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’ বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নে কৌশলী ভূমিকা নেবে বিএনপি। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী দিলে পরবর্তীতে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের সময় সরকার ষড়যন্ত্র করে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এটা এড়াতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দুজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। যেখানে একজন থাকবে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে।’ জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দলীয় ফরম জমা দিয়েছেন ১৭৯ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন ২৬ নারী। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রায় অধিকাংশের বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াওয়ের একাধিক মামলা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ প্রার্থীরই সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০টি মামলা রয়েছে। বিগত সময়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আসামি হওয়া নেতারা এখন এসব মামলাকে পুঁজি করেই দলীয় মনোনয়নের দাবি করছে। গতকাল কাউন্সিলর পদ প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও মামলা ও কারাবরণের বিষয় দুটি তুলে ধরে নিজেকে মনোনয়ন দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন। ৫টির অধিক মামলার আসামি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে ৩ নং ওয়ার্ডে মো. ইলিয়াছ, ৪ নং ওয়ার্ডে মাহবুবুল আলম ও শরীফ উদ্দিন খান, ৫ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আজম ও জানে আলম জিকু, ৬ নং ওয়ার্ডের আবদুল আজিজ, হাসান লিটন, ৮ নং হাসান ওসমান চৌধুরী, ১০ নং ওয়ার্ডে আব্বাস রশিদ, ১৬ নং সালাউদ্দিন কায়সার লাভু, ১৭ নং ওয়ার্ডে এ কে এম আরিফুল ইসলাম ডিউক, ১৯ নং ওয়ার্ডে এম আই চৌধুরী, ২৪ নং ওয়ার্ডের খায়রুল আলম দীপু, ২৫ নং মো. হাসেম, ২৭ নং ওয়ার্ডে সেকান্দার হোসেন খান, ২৯ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ৩৩ নং ওয়ার্ডে আকতার খান, ৩৬ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হারুন প্রমুখ। 

নির্বাচনী অঙ্গীকার : চট্টগ্রাম মহানগরের প্রায় ৭০ লাখ বাসিন্দার স্বপ্ন একটি পরিকল্পিত নগর। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পরিকল্পিত নগর গড়াই আমার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। অতীতের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মেয়র, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং নগরবাসীকে নিয়ে পরিকল্পিত ও আধুনিক নগর গড়তে আমি প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করব।’  

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার প্রথম অগ্রাধিকার থাকবে একটি পরিকল্পিত নগর। দল মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচিত হলে এটি গড়ার লক্ষ্যে আমি সব ধরনের উদ্যোগ নেব।’

সর্বশেষ খবর