মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রকাশনায় পিছিয়ে ভাষা আন্দোলন

মোস্তফা মতিহার

প্রকাশনায় পিছিয়ে ভাষা আন্দোলন

ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতেই একুশের গ্রন্থমেলা। তবে আফসোসের বিষয়, একুশে গ্রন্থমেলায় বরাবরের মতো এবারও প্রকাশনার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে একুশ তথা ভাষা আন্দোলনের বই। এবারের মেলায় এ পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে ৩ হাজার ৯৯২টি। এর মধ্যে ভাষা আন্দোলন নিয়ে বই প্রকাশ পেয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে এবারের মেলায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই হলো কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত এম আবদুল আলীমের ‘ভাষা-আন্দোলন-কোষ’ প্রথম খন্ড, ও ‘ভাষা সংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ’, নালন্দা এনেছে সোহেল মল্লিক সম্পাদিত ‘ভাষা আন্দোলনের নির্বাচিত ৫০ কিশোর গল্প’, আফসার ব্রাদার্স প্রকাশ করেছে সাঈফ আবেদীনের ‘শিশু-কিশোরদের একুশের গল্প’, অন্বেষা প্রকাশ থেকে প্রকাশ হয়েছে দীপন নন্দীর ‘একুশের স্মৃতি’, অন্যপ্রকাশ বের করেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা’সহ বেশ কয়েকটি বই।

ভাষা আন্দোলনের বইয়ের অপ্রতুলতায় মেলায় আগত অনেক পাঠকের মাঝেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক রুচিশীল পাঠক মনে করছেন, এতে একুশের মেলায় একুশই নি®প্রাণ। তারা বলছেন, প্রকাশক ও লেখকরা অতিমাত্রায় বাণিজ্যের আশায় সস্তামানের বইগুলোই বেশি প্রকাশ করছেন। বরাবরের মতো এবারের মেলায়ও অবহেলিত অবস্থায়ই আছে একুশের চেতনা।

মেলায় একুশের বইয়ের অপ্রতুলতা নিয়ে ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন এটাকে সাধুবাদ জানাই। তবে নতুনদের কারও কারও বইয়ে তথ্যগত কিছু ভুল পাওয়া যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের মতো সংবেদনশীল একটি বিষয়ে লেখার আগে শুধু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলেই হবে না। সেগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর লিখতে হবে।

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন বিষয়ক নতুন বই একটু কম প্রকাশ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে একেবারেই যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। আমি মনে করি নতুন নতুন গবেষণার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের আরও নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হবে।

এদিকে গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৩তম দিনে মেলা প্রাঙ্গণে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মেলা পরিদর্শন করেন। এ সময় তাকে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থ উপহার দেন মহাপরিচালক।

বিকাশের প্রতারণা : একুশের গ্রন্থমেলায় বই কিনে বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে ১০% ক্যাশব্যাক দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও অনেক ক্রেতা ঘোষিত সেই ১০% ক্যাশব্যাক পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরতরাও এই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নূরে আলম সিদ্দিকীর তিন বই : এবারের বইমেলায় সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি ও ইতিহাসের চলমান প্রসঙ্গ নিয়ে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধুর ‘চার খলিফা’র অন্যতম নূরে আলম সিদ্দিকীর তির্যক আলোচনানির্ভর বই ‘কালের কলধ্বনি’ প্রকাশিত হয়েছে। এটির প্রকাশক কারুবাক প্রকাশনী (স্টল নম্বর ৩২৫)। বিশ অধ্যায়ে সুলিখিত ১৫০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে লেখক তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে বর্তমান সময়ের সংকট, গণতন্ত্র, রাজনীতি নিয়ে সুচিন্তিত মতামত খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ইতিহাসের আলোকে আগামীতে গতি-প্রকৃতি কোনদিকে যেতে পারে- তাও তিনি এতে উল্লেখ করেছেন।

কারুবাক প্রকাশনী থেকে লেখকের এর আগেও দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হলো- ‘একাত্তরের অজানা অধ্যায় : এক খলিফার বয়ান’, ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী নই, তবুও সমালোচনা করি’।

মূলমঞ্চ : গতকাল বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাইমন জাকারিয়া রচিত ‘সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন সুমন কুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেন নাসির আহমেদ এবং স্বকৃত নোমান।

সবশেষে কবিতা পাঠ করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা, মাহমুদ আল জামান, ইকবাল হাসান, আশরাফ আহমেদ, জাফর আহমদ রাশেদ, ফারুক আহমেদ এবং রাসেল রায়হান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সংগীত সংগঠন ‘সুর সুধা সংগীতায়ন’, ‘হামিবা সাংস্কৃতিক একাডেমি’। একক সংগীত পরিবেশন করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, প্রমোদ দত্ত এবং আবিদা রহমান সেতু।

সর্বশেষ খবর