সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা

চট্টগ্রামে তৈরি হচ্ছে পিপিই

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে তৈরি হচ্ছে পিপিই

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় বিশেষ নিরাপত্তায় তৈরি হচ্ছে পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই)। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয় স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডকে প্রথমে ১ লাখ পিপিই তৈরির কার্যাদেশ দেয়। পরে আরও ৫০ হাজার তৈরির আদেশ দেওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত তৈরি হওয়া প্রায় ১ লাখ পিপিই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং বাকি ৫০ হাজার কাল মঙ্গলবারের মধ্যে পাঠাতে পারবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব পিপিই চিকিৎসক, নার্সরা ব্যবহার করবেন। স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিপিই তৈরির নির্দেশনা দিয়েছি। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে পিপিই তৈরির কাজ চলছে। স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের পরিচালক শফিকুল রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই সরকার পিপিই তৈরির জন্য পছন্দ করেছে। পিপিই তৈরির মধ্য দিয়ে আমরাও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত। এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞ আমরা। আমাদের তৈরি পিপিই আমেরিকায়ও রপ্তানি হয়। পিপিই তৈরির বিশেষায়িত মেশিন ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান আমাদের রয়েছে। একটি বিশেষায়িত ফ্লোরে অভিজ্ঞ শ্রমিক দ্বারা পিপিই তৈরির কাজ চলছে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে আমাদের কারখানার পিপিই আগেই রপ্তানি হতো। আমেরিকার একটি বায়ারের আমাদের পিপিই সংগ্রহে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে। এ বুকিং বাতিল করে সরকারের আগ্রহ ও সংকটকালীন সময় বিবেচনায় নিয়ে পিপিই প্রস্তুত করা হচ্ছে।

স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) বিপ্লব কুমার মজুমদার বলেন, পিপিই তৈরির পাশাপাশি যেসব কাজের অর্ডারের প্রস্তাব পেয়েছি, সেগুলো দ্রুত তৈরির কাজ চলছে। পিপিই তৈরির জন্য কারখানায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কারখানার নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত কাপড় থাকায় সরকারের অর্ডার পাওয়া মাত্র কাজ শুরু করতে পেরেছি। এলসি করে কিংবা বিমানে এ কাপড় আনতে গেলে অনেক দিন সময় লাগত। এখন শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় দ্রুত সময়ে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। একই কথা বললেন নিরাপত্তায় থাকা ফ্যাক্টরির কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিশে^র বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দেশেও সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রামেও পিপিই তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সমস্যার প্রতিরোধে কাজ করছেন এবং ইতিমধ্যে আরও সচেতন হতে সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট ও কারখানা সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পৃথকভাবে ১ লাখ পিপিই তৈরির দুটি কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত ২৪ মার্চ এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন। গত শনিবার আরও ৫০ হাজার পিপিই তৈরির অর্ডার পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ১ লাখ পিপিই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ৩১ মার্চের মধ্যেই বাকি পিপিই তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের চতুর্থ তলার একটি ফ্লোরে পিপিই তৈরির কাজ চলছে। কাজের দেখভাল করছেন ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় শ্রমিকরা এসব পিপিই তৈরিতে কাজ করছে। ১৩টি লাইনের আলট্রাসনিক মেশিনে পিপিইগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কোনোরূপ সেলাই ছাড়াই তিনটি রঙের পিপিই তৈরি হচ্ছে। এ পিপিইগুলোতে কোনোরূপ পানি ঢুকবে না, প্রবেশ করবে না বাতাসও। কারখানাটিতে এখন পিপিই তৈরিতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

সর্বশেষ খবর