সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনায় বদলে গেছে চিত্র

চিড়িয়াখানায় ফুরফুরে পশুপাখি

মোস্তফা কাজল

চিড়িয়াখানায় ফুরফুরে পশুপাখি

করোনাভাইরাসের কারণে বদলে গেছে ঢাকার মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার চিত্র। জনসমাগম না থাকায় সেখানের পশুপাখিরা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। যা অনেকটা বণ্য পরিবেশে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে রয়েছে সব আয়োজন। চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবদি এমনচিত্র দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে গতকাল জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়েই প্রধান ফটকে চোখে পড়ে সাইন বোর্ডের সর্তকবাণী। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ভিতরে যেতে হবে। দু-কদম এগোতেই চোখে পড়ে শুধু অনুমোদিত যানবাহনই ভিতরে ঢুকছে। তবে ঢোকার সময় জীবাণুমুক্ত স্প্রে করানো হচ্ছে। পাশাপশি আগতদের দু-পায়ে জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে করাচ্ছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। এভাবে সর্তকাবস্থায় রাজধানীর অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র জাতীয় চিড়িয়াখানার বর্তমান চিত্র। ভিতরে কোথাও কোলাহল নেই। ছায়াঘেরা পরিবেশে শুধুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। দর্শনার্থীর প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় চিড়িয়াখানার ভিতরটা একেবারেই জনমানব শূন্য। চিড়িয়াখানার অ্যানিম্যাল কেয়ারটেকার গোলাম সারওয়ার জানান, গত কয়েক দিনে চিড়িয়াখানার বড় বড় গাছ-গাছালিতে অনেক নতুন নতুন পাখি দেখা গেছে। এর মধ্যে দুটি দুর্লভ হুদহুদ পাখিও আবাস গড়েছে গাছের মগডালে। এত পাখির কিচিরমিচির শব্দ কখনোই শোনা যায়নি। হরিণের খাঁচার বাইরের দৃশ্যটা পুরোপুরি অচেনা লেগেছে। একই অবস্থা বাঘ ও সিংহের খাঁচায়। প্রাণিগুলো স্বস্তিতে রয়েছে। নেই কোনো উৎপাত। চিড়িয়াখানার মাংসাশী শাখার জু কর্মকর্তা গোলাম আযম বলেন, চিড়িয়াখানায় দুই হাজার ৭৭৮টি প্রাণী আছে। এখন সেগুলোর চোখে মুখে ভয়ের লেশমাত্র নেই। মনমেজাজ বেশ ফুরফুরে। আনন্দে উৎফুল্ল তারা। বিরক্ত হচ্ছে না একটুও। খাওয়ার পর শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। চিৎকার-চেঁচামেচি নেই। এখন প্রাণীগুলোর পরিচর্যারও অভাব হচ্ছে না। গত ২০ মার্চ থেকে চিড়িয়াখানা জনশূন্য হতেই পশুপাখির আচরণে নানা ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। পশুদের খাবার দেওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মীরা বললেন-বাঘ, সিংহ, জেব্রা, জিরাফ বা হরিণের মতো প্রাণীদের এতদিন খাঁচার কিনার এড়িয়ে চলতে। এখন ওরা নির্ভয়ে চলাফেরা করছে। বেশির ভাগ প্রাণী মানুষকে এড়িয়ে চলে। দর্শক না থাকার ফলে ওরা খুব স্বস্তিত্বে আছে। পাখিগুলোকেও স্বচ্ছন্দে ওড়াউড়ি করতে দেখা যাচ্ছে। ওরাও খাঁচার ধারের দিকে এসে ঘুরছে। ফাঁকা পরিবেশ পশুপাখির ওপরে কী প্রভাব ফেলবে এ নিয়ে সংশয়ে ছিল কর্তৃপক্ষের। যত দিন গড়িয়েছে তত বোঝা গেছে- দর্শক না থাকায় বেশ খুশি চিড়িয়াখানার প্রাণী ও পাখিরা। ১৪ দিন মানুষের দর্শন না পেয়েই প্রাণীদের আচরণে এমন পরিবর্তন ঘটেছে। এমনটা জানিয়ে চিড়িয়াখানার কর্মীরা বলেন, প্রাণীদের বিরক্ত করা আগত কিছু বেশিরভাগ দর্শনার্থীদের সহজাত অভ্যাস। এগুলো অপছন্দ খাঁচাবন্দী প্রাণীদের। বন্ধ থাকার কারণে চিড়িয়াখানায় যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। তাতে প্রাণীগুলো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবে। চিড়িয়াখানায় যাতে কোনোভাবেই জীবাণুর সংক্রমণ না দেখা দেয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কিউরেটর ডা. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি শিফটে ৭০ কর্মীকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। সব কর্মীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারও করতে বলা হয়েছে। সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রাণীদের খাবার সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে কিনা- এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন মাছ, মাংস, ডিম, ফলসহ ১৬ আইটেমের খাবার আসে। প্রতিদিনের মতো নির্দিষ্ট ঠিকাদাররা প্রাণীদের খাবারের জোগান দিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর