রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সমাবেশে ধর্ষকদের ছাড় না দেওয়ার প্রত্যয় পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। নারী নির্যাতনবিরোধী সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয় তারা। একই সঙ্গে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সচেতন হয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছে। গতকাল সারা দেশে বিট পুলিশিংয়ের জনসচেতনতামূলক সমাবেশ থেকে এ কথা বলেন তারা। পুলিশের প্রতি সমাজের মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি ও অপরাধীদের কোনোভাবেই ছাড় না দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করতেই এই সমাবেশ। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী সমাবেশে পুলিশসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নারী ও শিশু অধিকার কর্মী, স্থানীয় নারী ও স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সকাল ১০টায় ৬ হাজার ৯১২টি বিটে একযোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের বিট পুলিশিং কেন্দ্রের ৬ হাজার ৯১২টি ফেসবুক পেজে। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, সারা দেশে লাখ লাখ নারী ও পুরুষ সশরীরে উপস্থিত ছিলেন এই সমাবেশে। কোটি কোটি দর্শক ও সাধারণ মানুষ এই সমাবেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছেন। নিঃসন্দেহে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তেও অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিবাদ সমাবেশ। এতে পুলিশ সদস্য ছাড়াও অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রত্যেকের অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী বিট পুলিশিং সমাবেশ’ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে ধর্ষণ ফ্রন্টলাইনে চলে আসছে। ধর্ষণের বিষয়ে সারা দেশের প্রান্তিক স্তরের মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে সে জন্য এ ধরনের সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে করে কোনো পরিবারের কোনো বাবা-মায়ের ছেলে ধর্ষণের আসামি না হয়। আর কোনো পুরুষ যদি ধর্ষকের উপাধি পেয়ে যায়, তাহলে তার মৃত্যুদন্ড হবে, এটা যাতে তারা বুঝতে পারে। এখন ধর্ষণ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে আসামিরাও ধরা পড়ছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হলো। এর ফলে কিছুটা হলেও এর ভয়াবহতা কমবে।’ ডিএমপির ৫০টি থানার ৩০২টি বিট পুলিশিং এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত সমাবেশে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী পোস্টার, লিফলেট ও প্লাকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণকে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় এবং এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে পেশাদারির সঙ্গে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও সমাবেশে জানানো হয়েছে। এদিকে রাজধানীর কোতোয়ালিতে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী বিট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুলবুল ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে  বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রাজীবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদার, বুলবুল ললিতকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, সদরঘাট বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন, কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাজী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া এদিন বরিশাল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, মুন্সিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, নাটোর, শেরপুর, টঙ্গী, ময়মনসিংহের ভালুকা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, নীলফামারী, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিট পুলিশিং সমাবেশ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর