বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দুর্লভ আবাসিক দাগি নাটাবটের

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

দুর্লভ আবাসিক দাগি নাটাবটের

দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোয়েল পাখি। আকৃতিও অবিকল কোয়েলের মতোই। কিন্তু কাছে গেলেই পাল্টে যায় ভুল, আসলে কোয়েল নয়, এরা আমাদের দেশের আবাসিক পাখি দাগি নাটাবটের। এক সময় সারা দেশেই এদের প্রচুর দেখা যেত। কিন্তু সংখ্যায় কমতে কমতে এখন এদের দেখা পাওয়া দুর্লভ। পাখি বিশারদরা জানান, এদের কমে যাওয়ার পেছনে মূলত মানুষই দায়ী। দাগি নাটাবটের-এর ইংরেজি নাম Barred Buttonquail. আর বৈজ্ঞানিক নাম Turnix suscitator. এরা টার্নিসিডি পরিবারের এক প্রজাতির ছোট ভূচর পাখি। বিশ্বে এদের আছে ১৮টি প্রজাতি। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে তিন প্রজাতি। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের শৌখিন ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজম কমলগঞ্জের কুরমা চা- বাগানের ছনখলা থেকে এই পাখির ছবি তুলেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, দক্ষিণ চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এদের বৈশ্বিক বিচরণ। জানা যায়, দাগি নাটাবটের সারা বিশ্বে এখনো বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা লম্বায় ১৫ সে.মি। মেয়ে পাখি ছেলে পাখির থেকে বেশি রঙিন। ছেলে পাখির পিঠ লালচে বাদামি ও কালো। ডানা পালক ঢাকনিতে খাড়া। থুতনি ও গলা সাদাটে। বুক ও ঘাড়ের পাশে পীতাভ ও কালো ডোরা রয়েছে।

আর মেয়ে পাখির থুতনি, গলা ও বুকের ঠিক মাঝখানে কালচে। বুকের পাশ ও তলদেশে কালো ও পীতাভ ডোরা রয়েছে। তবে উভয়েরই চোখ সাদা বা হলদে। পা ও পায়ের পাতা সিসার মতো ধূসর। এরা ঝোপ, জঙ্গল, তৃণভূমি ও বনে বিচরণ করে। কখনো একাকী, কখনো বা জোড়ায় জোড়ায়। মাটিতে হেঁটে ঝরাপাতা উল্টে খাবার খুঁজে খায়। আর একই দিনের পর দিন একই জায়গায় খাবার খেতে আসে। এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে শস্যদানা, বুনোবীজ, উঁই পোকা, পিঁপড়া। জুন থেকে অক্টোবর এদের প্রজননের সময়। এ সময় ঘাস দিয়ে ছোট করে মাটিতে ঝোপের কাছে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে চার-পাঁচটি। ধূসর সাদা রঙের ডিমে লালচে বা কালচে বেগুনি আঁচ থাকে। ডিমে তা দেয় পুরুষ পাখি। ডিম থেকে ছানা ফুটতে সময় লাগে ১৫ দিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মোস্তফা জানান, দাগি নাটাবটের একসময় বাংলাদেশে দেখা যেত, কিন্তু এখন খুবই দুর্লভ। মানুষের বসতি কম দেশের এমন দু-একটি জায়গা ছাড়া এখন আর এদের দেখা যায় না। দিনে দিনে মানুষের কারণেই এদের আবাসস্থল, ডিম পাড়ার জায়গা, পরিবেশ বা প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তারা ডিম দিতে পারছে না। আবার কিছু কিছু জায়গায় মানুষ এদের শিকার করছে। মানুষের কারণেই এরা কমে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর