অর্ধশতাধিক দখলদার গিলে খাচ্ছে ঢাকা শহররক্ষা বাঁধ। প্রায় শত কোটি টাকার জায়গাজুড়ে বাউন্ডারি তুলে গড়ে তোলা হয়েছে বালুর গদি, বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, বিশালকায় গ্যারেজ। অস্ত্রধারী পাহারা বসিয়ে সরকারি জায়গা পৈতৃক ভিটেমাটির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে নানা স্থাপনা। এসব আবার উচ্চমূল্যে ভাড়াও দিচ্ছেন দখলদাররা।
সরেজমিনে গাবতলী ব্রিজের পুবপাশ থেকে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত তুরাগ নদের তীরঘেঁষা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধজুড়ে দখলবাজির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ এবং বিআইডব্লিউটিএর জায়গা দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ভাড়া দেওয়া হচ্ছে উচ্চমূল্যে। পজিশন আকারে কেনাবেচা হচ্ছে বলে রয়েছে অভিযোগ।
কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি : সরকার-ঘোষিত বালুমহাল না থাকলেও ঢাকা শহররক্ষা বাঁধ খ্যাত বেড়িবাঁধ-ঘেঁষা তুরাগ নদের অর্ধশতাধিক পয়েন্টকে বালুমহালের মতোই ব্যবহার করা হচ্ছে। ওয়াকিফহাল মহলের মতে এখানে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও সরকার হারাচ্ছে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব। রাতদিন সেসব স্থান থেকে লাখ লাখ ঘনফুট বালু রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বালু বহনকারী শত শত ট্রাকের আনাগোনায় ওই এলাকায় রাতদিন যানজট লেগেই থাকে।
জানা গেছে, তুরাগ তীরজুড়ে ফেঁদে বসা বালুবাণিজ্যের সঙ্গে শতাধিক মহাজন ব্যবসায়ী জড়িত। তাদের আলাদা গদিঘর আর উঁচু উঁচু বালু সংরক্ষণাগারও আছে। সেখানে ভেকু, ড্রামট্রাক, ড্রেজার, সয়েল কাটারসহ বড় বড় মেশিনারিজে ভরে আছে তুরাগ তীর। রাতদিন এসব যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মিরপুর শাহ আলী (রহ.)-এর মাজারের দর্শনার্থীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। মিরপুর শিন্নিরটেক, দিয়াবাড়ী, জহুরাবাদ, চিড়িয়াখানাসংলগ্ন মহল্লাসমূহ, ইস্টার্ন হাউজিং, স্লুইসগেট, ধউর, কামারপাড়া, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ ২০-২২টি ঘনবসতিপূর্ণ মহল্লার বাসিন্দারা রীতিমতো বালু অভিশাপে জর্জরিত।
বেড়িবাঁধ বেদখল হচ্ছে যেভাবে : সরকারি বেড়িবাঁধ দখলের ক্ষেত্রে প্রায় সবাই অভিনব কৌশল ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সংশ্লিষ্ট জায়গা লিজ নেওয়ার আবেদন করেই এসব জায়গা কব্জায় নিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সেখানে লিজ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত কখনই ছিল না, হবেও না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, বেড়িবাঁধ ও আশপাশে কোনো লিংক রোড করারও অনুমতি দেওয়া হয় না। সেখানে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ কোথায়?