বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

পান্থপরিযায়ী বালুচরা

আলম শাইন

পান্থপরিযায়ী বালুচরা

পরিযায়ী এবং পান্থ পরিযায়ী উভয় স্বভাবই এদের মধ্যে লক্ষণীয়। সুলভ দর্শন তো বটেই। দেশে শীতের প্রারম্ভেই আগমন ঘটে। পরিযায়ী হয়ে আসে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। দেখা মেলে উপকূলীয় এলাকার বালুকাবেলায়। আকারে খাটো হলেও চেহারা নাদুস-নুদুস। মায়াবী গড়ন। দেখতে গোবেচারা টাইপ। স্বভাবে শান্ত। নিজেদের মধ্যে অহেতুক ঝগড়া বাধায় না। শিকারে বের হয় একাকী কিংবা ছোট দলে। সৈকতে পাঁয়চারি করে দিনভর। এরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটে খুব কমই। দৌড়ের ওপর থাকে সারাক্ষণ। বলা যায় অকারণেও দৌড়ায়। সৈকতে বিচরণরত অবস্থায় প্রহর গোনে ঢেউ সরে যাওয়ার। ঢেউ সরে গেলে কর্দমাক্ত বালুকারাশিতে দ্রুত ঠোঁট চালিয়ে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। সাধারণত এরা জলে নেমে শিকার খোঁজে না। নামলে বড়জোর হাঁটুসমান জলে নামে। বিচরণরত অবস্থায় কিছুক্ষণ পর পর উড়ে উড়ে স্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়। এ সময় তীক্ষèস্বরে ডাকে ‘উইক উইক উইক’। বাংলাদেশে আগমন ঘটে অক্টোবর নাগাদ। ফিরে যায় মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই। প্রজনন ঘটায় নিজ বাসভূমে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা পর্যন্ত।

পাখির বাংলা নাম : ‘বালুচরা’, ইংরেজি নাম : ‘স্যান্ডারলিং’ (Sanderling) বৈজ্ঞানিক নাম : Calidris alba. এরা ‘বালুকাবেলার চাপাখি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৮-২০ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, ও পিঠ  ফিকে বাদামির ওপর কালো দাগ। লেজ ধূসর, দুই পাশ সাদা। লেজের মধ্য পালকের ডগা বাদামি। গলা ও বুক ফিকে বাদামির কালো দাগ। বুকের নিচ থেকে সাদা। প্রজনন মৌসুমে দেহতল ধবধবে সাদা দেখায়। ঠোঁট শক্ত, সোজা ও লম্বাটে, অগ্রভাগ সামান্য সুচালো। ঠোঁট, পা ও আঙুল কালো। প্রজাতির অন্যদের মতো এদের পায়ের পেছনের আঙুল নেই।  স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবার : কীটপতঙ্গ, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জুন-জুলাই। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলে। এরা সরাসরি মাটিতে ঘাসলতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৭ দিন।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর