বুধবার, ৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পণ্য পাচ্ছে না নগদ সহায়তা

ফাইলেই আটকে গেল সুপারিশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা সংকটে দেশের রপ্তানি খাতকে সহায়তার জন্য নতুন ২০টিসহ মোট ২৬ ধরনের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের জুলাইয়ে করা এ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা তাগিদপত্রও পাঠানো হয়। একে একে নয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন শোনা যাচ্ছে নগদ সহায়তার ওই সুপারিশ এবার আর কার্যকর হচ্ছে না। নতুন অর্থবছরে নতুন পণ্য বিবেচনা করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার সুপারিশ করার দুই মাসের মধ্যে সাধারণত তা কার্যকর হয়। জুলাইয়ে সুপারিশ করার পর দেখা যায় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে এ সুবিধা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিস্ময়কর হচ্ছে, এবারই প্রথম রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার সুপারিশ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকেও কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে জানতে চাইলে সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার জন্য পণ্যের সুপারিশ করে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সুপারিশ বাস্তবায়নের পরের ধাপগুলোর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পৃক্ত। এখন তাদেরই এটি কার্যকর করা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. হাকিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ পাওয়ার পর নগদ সহায়তার খাতভিত্তিক প্রণোদনা চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি মিটিং করেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর করোনার কারণে সে মিটিং করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার যে সুপারিশ ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি। আগের অর্থবছরের সার্কুলার অনুযায়ী নগদ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, এ বছর আর নগদ সহায়তার সুপারিশ কার্যকর হচ্ছে না। নতুন অর্থবছরে সুপারিশ পেলে তখন তা কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশি পণ্যের রপ্তানি সম্প্রসারণে চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন ও পুরনো মিলিয়ে মোট ২৬টি খাতে নগদ সহায়তার সুপারিশ করা হয়েছিল। এ সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাতগুলোর সম্পর্কে ট্যারিফ কমিশন থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া পণ্য তালিকা চূড়ান্ত করার আগে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গেও এ বিষয়ে সভা করে মতামত নেওয়া হয়। এরপর করোনা সংকট মাথায় রেখে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে কভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার, ভেনটিলেটর, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, প্লাস্টিকের খেলনা, লাইভ ফিশ (কাঁকড়া ও কুঁচে) স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ, আইসিটি খাতের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার, সয়া অ্যাসিড অয়েল, মাছের আঁশ রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, প্রাকৃতিক রাবার এবং লেটেক্স রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, গার্মেন্ট ঝুট থেকে উৎপাদিত তুলা, টেরিটাওয়েল, দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল পণ্য যেমন রেফ্রিজারেটর, এসি, নবায়নযোগ্য শক্তিকে উৎসাহ দিতে সোলার মডিউল ইত্যাদি রপ্তানিতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার সুপারিশ করা হয়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো একটি উদ্যোগ বা সুপারিশ নেওয়ার পর যখন তা বাস্তবায়নে জড়তা কাজ করে তখন ভালো নীতিরও সুফল মেলে না। ক্যাশ ইনসেনটিভের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর