মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ভারতে করোনার পর নতুন আতঙ্ক কালো ছত্রাক

প্রতিদিন ডেস্ক

চার দিন পর গত রবিবার ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা খানিকটা নেমে এসেছে। তবে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে বিরল ভাইরাস কালো ছত্রাক বা মিউকরমাইকোসিস। সূত্র : এনডিটিভি

খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে আগের দিনগুলোর তুলনায় দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যু কিছুটা কমেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী রবিবার ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৬১ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন, আর এ সময় আরও ৩ হাজার ৭৫৪ আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে টানা চার দিন দেশটিতে দৈনিক ৪ লাখের বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন, আর টানা দুই দিন ৪ হাজারের বেশি আক্রান্তের মৃত্যু ঘটেছে। শনাক্ত নতুন আক্রান্ত নিয়ে ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৫৭৫-এ দাঁড়িয়েছে। কভিড-১৯ সংক্রমিতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত।

চলতি মহামারীতে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ক্রমেই আড়াই লাখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন মৃতের মোট সংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজার ১১৬-এ দাঁড়িয়েছে। দৈনিক মৃত্যুর যে হার চলছে তাতে আগামী এক কি দুই দিনের মধ্যেই সংখ্যাটি আড়াই লাখ ছাড়াবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর বিশ্বে তৃতীয় স্থানে আছে দেশটি। আক্রান্তের সংখ্যায় ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকা মহারাষ্ট্রে এক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্ত ৫০ হাজারের নিচে নেমেছে। সংক্রমণের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটাতে দিল্লি ও হরিয়ানা লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। চলতি সপ্তাহে ভারতের রাজধানীতে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ থাকবে। উত্তর প্রদেশে ২০ মে পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। তামিলনাড়ুতে ঘোষিত দুই সপ্তাহের লকডাউন গতকাল সকালে শুরু হয়েছে। রাজ্যটির প্রতিবেশী কর্ণাটকে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪৮ হাজার নতুন আক্রান্ত শনাক্ত ও ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহামারীতে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতের এখন ত্রাহি অবস্থা। শয্যার অভাবে হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হতে না পারায় প্রায় বিনা চিকিৎসায় বহু রোগী মারা যাপ্রেণ। আবার হাসপাতালগুলোয় ভর্তি থাকা বহু রোগীও তীব্র অক্সিজেন সংকটে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এতে মহামারী মোকাবিলায় দেশটির চিকিৎসাব্যবস্থার দৈন্য ফুটে উঠেছে।

ভারতের কভিড-১৯ সংকটের একমাত্র সমাধান গণটিকাদান কর্মসূচি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। ভারতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হলেও ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের এ কর্মসূচির আওতায় আনার পর থেকে এর গতি হ্রাস পেয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটিতে উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা কভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের পর রাশিয়ার স্পুটনিক-ভিরও অনুমোদন দিয়েছে দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। ভারত এ পর্যন্ত স্পুটনিক-ভির দেড় লাখ ডোজের সরবরাহ পেয়েছে।

‘কালো ছত্রাক’ অঙ্গহানি ঘটাচ্ছে : ভারতের মুম্বাইয়ের চক্ষু চিকিৎসক ড. অক্ষয় নাইর শনিবার সকালে ২৫ বছরের এক যুবতীর অস্ত্রোপচার করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যিনি তিন সপ্তাহ আগে কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ওই যুবতীর অস্ত্রোপচারের সময় অপারেশন থিয়েটারে আরও ছিলেন একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ। রোগীর নাক থেকে একটি টিউবের মাধ্যমে তিনি মিউকরমাইকোসিস সংক্রমিত কোষ অপসারণ করেন। মিউকরমাইকোসিস হলো এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ, যা বিরল কিন্তু বিপজ্জনক। নাক, চোখ এবং অনেক সময় মস্তিষ্কেও এ সংক্রমণ দেখা যায়। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাজ শেষ হলে ড. নাইরের কাজ শুরু হওয়ার কথা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি রোগীর চোখ অপসারণ করবেন, এ ধরনের কাজে ঘণ্টা তিনেক লাগে। ড. নাইর বলেন, ‘রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্যই তার চোখটি অপসারণ করতে হবে। এ রোগটি এভাবেই দেহের ক্ষতি করে।’

 

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে বিরল এ সংক্রমণ নিয়ে রোগীর ভিড় বাড়ছে। কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন বা হচ্ছেন এমন রোগীদের মধ্যে ওই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, যাকে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা কালো ছত্রাকও বলা হয়।

মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে এলে এ সংক্রমণ ঘটে। মাটি, গাছপালা, বিষ্ঠা এবং পচা ফল ও সবজি থেকে কেউ মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে আসতে পারেন। ড. নাইর বলেন, এটা সবখানেই উপস্থিত। মাটি ও বাতাস এমনকি সুস্থ মানুষের নাকে বা কফেও এটা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে তাদের মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং একসময় দৃষ্টি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের পাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে। এ ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে।

ডায়াবেটিস, এইডস বা ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

চিকিৎসকদের ধারণা, কভিড-১৯ আক্রান্ত সংকটাপন্নদের জীবন বাঁচাতে যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে তাতেই মিউকরমাইকোসিসের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। স্টেরয়েড কভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শরীরের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করে তখন শরীরের কিছু ক্ষতি হয়। সে ক্ষতি কমাতে অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক হয় এসব স্টেরয়েড। কিন্তু স্টেরয়েড দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দমিয়ে রাখে, যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের নেই সবার রক্তেই চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকদের ধারণা, স্টেরয়েড যখন দেহের প্রতিরোধব্যবস্থা সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখছে, সে সুযোগেই মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর