শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বসুন্ধরার সহায়তা পেয়ে রংপুরে ৩ হাজার পরিবারের মুখে হাসি

দুই দিন পর রান্না হবে শাহানার বাড়িতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

বসুন্ধরার সহায়তা পেয়ে রংপুরে ৩ হাজার পরিবারের মুখে হাসি

রংপুরের ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করে বসুন্ধরা গ্রুপ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শাহানা বেগম রংপুর মহানগরের শালবন এলাকায় বিভিন্ন মেসে রান্নার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনায় মেস বন্ধ তাই কাজও নেই। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। এক মেয়ে ছিল তাকে বিয়ে দিয়েছেন। খুব কষ্টে তার দিন চলছে। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুই দিন ঘরে খাবার ছিল না। অন্যের বাড়ি থেকে খাবার এনে খেয়েছেন। বসুন্ধরার এ সহায়তায় আজ তার বাড়িতে রান্না হবে। তিনি বলেন, ‘আজ পেটপুরে খেতে পারব। আল্লাহ যেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানরে নেক হায়াত দান করেন। তিনি যেন গরিব মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়াতে পারেন।’ গতকাল দুপুরে রংপুর মহানগরের আরসিসিআই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে  বসুন্ধরার সহায়তায় ২৫০ জন হকার ও অতিদরিদ্রের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। সহায়তা পেয়ে শাহানা বেগম এসব কথা বলেন। শাহানা বেগমের মতো আঞ্জু বেগমও মানুষের বাড়ি গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তিনি জানান, করোনার জন্য কেউ আগের মতো বাসাবাড়িতে কাজের জন্য ডাকে না। তিনিও খুব কষ্টে ছিলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে তার মুখেও হাসি ফুটেছে। ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি খাদ্য সহায়তা পেয়ে দুই হাত তুলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করেন। পত্রিকা হকার জাকির হোসেন, রফিক মিয়া, সফিসহ অনেকেই খাদ্য সহায়তা পেয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, করোনার এই দুর্যোগের সময় বসুন্ধরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ সহায়তা তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। এ সময় উপস্থিত হয়ে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। রংপুরের হকার ও অতিদরিদ্র মানুষের হাতে সাত থেকে ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছে। আপনারা সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন আপনাদের পাশে সব সময় দাঁড়াতে পারেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, রংপুর জেলা সভাপতি ইরা হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরওয়াার রাব্বি, শুভ আহমেদ, আরিফ, রোকসানা, রিতু, সোহাগ, জাহিদ, রবি, রংপুর সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মারুফা আক্তার, মিন্টু, জিহাদ, সোহেল, সাদিকুল, রিপন, আরমান, ফজলু, নিশি, আরিফ, হাবিব প্রমুখ। এর আগে কাউনিয়া উপজেলায় ৩০০ অসহায় ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া সবার মধ্যে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। কাউনিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা তারিন বলেন, ‘আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে অনেক ধন্যবাদ জানাই করোনার সময় এমন চমৎকার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’ তিনি উপস্থিত উপকারভোগীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘কোনো খাদ্যসামগ্রীর প্রয়োজন হলে ৩৩৩ নম্বরে কল দেবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আবদুল হাকিম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুমুর রহমান, কাউনিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক, শুভসংঘের কাউনিয়া উপজেলা শাখার উপদেষ্টা সারওয়ার আলম মুকুল, মো. মোস্তাক আহমেদ, জহির রায়হান, সভাপতি শামিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন প্রমুখ। এরপর পীরগাছা উপজেলার কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩০০ অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ মো. মাহাবুবার রহমান। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ায়। প্রান্তিক অতিদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কণ্ঠ শুভসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য উপজেলার পক্ষ থেকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুল আরেফিন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম, কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ। বিকালে রংপুর মহানগরের উপকণ্ঠ বুড়ির হাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ৩০০ জনের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বুড়ির হাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল মোয়াজ্জোমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পরে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার চরবেষ্টিত কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ৩০০ অতিদরিদ্র ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু, গঙ্গাচড়া উপজেলা এসিল্যান্ড শরিফুল আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। বৃহস্পতিবার ও গতকাল রংপুরের আট উপজেলার ১০ স্থানে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। এ সহায়তার জন্য রংপুরের সুধীমহল বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর