শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বরূপে সৈকত মুখরিত সমুদ্র নগরী

জিন্নাতুন নূর, কক্সবাজার থেকে ফিরে

স্বরূপে সৈকত মুখরিত সমুদ্র নগরী

করোনা মহামারী সংক্রমণ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এরই মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব এই লীলাভূমি পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতও ফিরে পেয়েছে তার পুরনো রূপ। সকাল-বিকাল সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুু-বান্ধবদের নিয়ে জড়ো হচ্ছেন পর্যটকরা। ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে কিছুদিন আগেও নীরব থাকা এই সমুদ্র নগরী এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে উঠেছে।

করোনা মহামারীর বিধিনিষেধের পর গত ১৯ আগস্ট খুলে দেওয়া হয় এই পর্যটন নগরী। বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পরপরই দলে দলে পর্যটকরা এখন পাড়ি জমাচ্ছেন কক্সবাজারে। প্লেনে, বাসে, প্রাইভেট কারে আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে করেও ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাগর দেখতে ছুটে যাচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে উপচে পড়া পর্যটক না হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পর্যটক উঠেছেন। স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে পর্যটকদের ভালো উপস্থিতি চোখে পড়েছে। বিশেষ করে বিকাল হতেই সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সৈকতে এসে কেউ বিশাল ছাতার নিচে বসে সৈকত দেখছেন। আবার কেউ ওয়াটার স্কুটারে করে সমুদ্র ঘুরে দেখছেন। কেউ করছেন প্যারাসেইলিং। পর্যটকদের কেউ কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে স্থানীয় আলোকচিত্রীদের দিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছেন। সৈকতের  ছোট কিশোর-কিশোরীরাও পর্যটকদের কাছে শামুক-ঝিনুকের মালা ফেরি করে বেড়াচ্ছে। লাবণী পয়েন্টে কথা হলে কয়েকজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দীর্ঘ কয়েকমাস সৈকতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা বেকার ছিলেন। এতদিন জমা টাকা দিয়ে বা ঋণ করে চলেছেন। সৈকত পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে তারা আগামী দিনে পর্যটকের সমাগম আরও বাড়বে বলে আশা করছেন।

সৈকতে কথা হলে ঢাকা থেকে আসা নবদম্পতি নিলয়-সুহানা বলেন, গত বছর লকডাউনে আমাদের বিয়ে হয়। বন্ধ থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও হানিমুনে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলে এখানে আসব এমন পরিকল্পনা ছিল। সুযোগ হওয়ায় আর দেরি করিনি।

কক্সবাজার শহরে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা চার বন্ধুর সঙ্গে।  পেশায় ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী এই বন্ধুরা ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে এসেছেন। তাদের একজন সোহেল হাসান বলেন, আমরা চার বন্ধু এবার একটু ব্যতিক্রমী ট্যুর প্লান করেছি।  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে শহর থেকে বাইক রেন্টের দোকান থেকে বাইক নিয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে সোজা টেকনাফ চলে যাব। একপাশে সমুদ্র আরেক পাশে পাহাড়। এই সৌন্দর্য বলে বোঝানো যাবে না। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার মূল সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ হয়ে হিমছড়ি, ইনানী সমুদ্রসৈকত এবং পাটুয়ার টেকে চোখে পড়ারমতো পর্যটক। পর্যটকদের আনাগোনায় রাতের বেলাতেও সমুদ্রসৈকত এখন গমগম করছে। কেউ বিচ সাইড রেস্তোরাঁর সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে খাবার খাচ্ছেন আবার কেউ সমুদ্রের পাড় ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের সরব উপস্থিতিতে গভীর রাত পর্যন্তও পর্যটকদের সৈকতে দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রঘেঁষা  দোকানগুলোতে মালা, শুঁটকি, আচার, ঘর সাজানোর নানান সামগ্রী দেদার বিক্রি হচ্ছে। আবার ভোজন রসিকদের জন্য বিক্রি হচ্ছে টাটকা সামুদ্রিক মাছ। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত সমুদ্রসৈকতে আসা পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং করছি। তবে এক্ষেত্রে পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে থাকছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর