মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনে ট্রাকচালক রাতে ডাকাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনে ট্রাকচালক, রাতে দুর্ধর্ষ ডাকাত। চুরি করা ট্রাক নিয়েই ওরা অংশ নিত ডাকাতিতে। গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে বগুড়ার গাবতলী থানার দুর্গাহাটা বাজারে চুরি করা ট্রাক নিয়ে তিনটি মার্কেটে ডাকাতি করে। নৈশপ্রহরীদের হাত-পা বেঁধে ওই তিন মার্কেটে ডাকাতির ঘটনায় স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডাকাত দলের দলনেতাসহ পাঁচজনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। গ্রেফতাররা হলো- দলনেতা দেলোয়ার হোসেন, আবদুল হালিম মিয়া জুয়েল, আলী হোসেন, সুমন মুন্সি ও হুমায়ুন কবির। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল, দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন বলেন, গাবতলীর মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে নৈশপ্রহরীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ৯টি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে ডাকাত দল। এ ঘটনায় দোকানের মালিকদের পক্ষ থেকে গাবতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করে। ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দলটি দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপরাধে জড়িত এবং সংঘবদ্ধ দলটি বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়মিত ডাকাতি করত। অভিযানে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুটি রাম দা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, ১০টি লাঠি, একটি হাতুড়ি, একটি টর্চ লাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে স্বর্ণের তিনটি বালা, তিনটি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, দুটি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের তিনটি গলার হার, চারটি গলার চেইন, তিন জোড়া কানের দুল, একটি বড় আংটি, একটি ছোট আংটি ও তিন জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, স্থায়ী নিবাস বিভিন্ন জেলায় হলেও তারা সাভার ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাস করেন। এই সংঘবদ্ধ আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, তালা ও গ্রিল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র তারা ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে রাখে। তারা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মার্কেটের দোকান, শো-রুম, জুয়েলারি শপে ডাকাতি করত। ইতিপূর্বে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে বলে জানায়। পরিকল্পনা মোতাবেক ১২ জনের এ ডাকাত দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাবতলীর দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতি করে। ডাকাতদের একটি দল বাজারে পাহারারত তিন নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় অপর দলটি আগে থেকে রেকি করা তিনটি মার্কেটের ৯টি দোকানের তালা ভেঙে দোকানের ভিতর রক্ষিত মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী লুট করে। ডাকাতি করে সাভারের নবীনগরে আসার সময় লুণ্ঠন করা মালামালের মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেমগুলো একটি মার্কেটে বিক্রি করে। ডাকাতিকালে টিভি, মোবাইল ও অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এ ছাড়া বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার তারা ঘটনার পরদিন অন্য দুটি মার্কেটের জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করে বলে জানায়।

সর্বশেষ খবর