শনিবার, ১৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মেট্রো স্টেশনেই সব সেবা

বাস, ট্রেন ও নৌপথের সমন্বয়, থাকবে পার্কিং ব্যবস্থা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গাবতলী ও উত্তরায় পাইলট প্রকল্প, টিওডির নীতিমালা করছে রাজউক

হাসান ইমন

মেট্রো স্টেশনেই সব সেবা

মেট্রোরেল স্টেশনকেন্দ্রিক ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) হাব করা হবে। এতে স্টেশনের ৫০০ মিটার এলাকায় সব ধরনের নাগরিক সেবা থাকবে। স্টেশনকেন্দ্রিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা, গাড়ি পার্কিং, শপিংমল, ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ বাস, ট্রেন ও নৌপথের সমন্বয় করে মাল্টিমোডাল হাব গড়ে তোলা হবে। যাতে নাগরিকরা হেঁটে স্টেশনে আসতে পারেন। প্রাথমিকভাবে গাবতলী ও উত্তরা স্টেশনকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আর অন্যান্য স্টেশনকেন্দ্রিক টিওডি করার জন্য নীতিমালা তৈরি করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

রাজধানীতে নির্মীয়মাণ মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত একটি অংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে এমআরটি লাইন-৬ এর ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ লাইনে মোট ১৫টি স্টেশন। এর মধ্যে রাজউক দুটি স্টেশনে পাইলট প্রকল্প হিসেবে টিওডির ডিজাইন করে দেবে। গাবতলী স্টেশনটির বাস্তবায়নে থাকবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। আর উত্তরা স্টেশনটির বাস্তবায়নে থাকবে ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড’ (ডিএমটিসিএল)। আর বাকি স্টেশন কীভাবে টিওডি তৈরি করা হবে সেগুলোর নীতিমালা তৈরি করবে রাজউক।

এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) টিওডি সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাবতলী ও উত্তরায় পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)সহ অন্যান্য ট্রানজিট স্টেশনকেন্দ্রিক পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরি যা ভবিষ্যতে সব ট্রানজিট স্ট্রেশনভিত্তিক উন্নয়নে গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। পথচারী ও পরিবেশবান্ধব মিশ্র ব্যবহার ও উচ্চ জনঘনত্ব টিওডি এলাকার অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য।’

তিনি আরও বলেন, টিওডি বাস্তবায়নে ঢাকা শহরের যানজট কমে যাবে। কারণ মেট্রো স্টেশনকেন্দ্রিক মাল্টিমোডাল হাব তৈরি করা হলে, সেখানে আবাসিক, বাণিজ্যিক, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান করা হবে যাতে স্টেশনকেন্দ্রিক মানুষের চলাফেরা থাকে। এতে করে রাজধানীর পরিবহন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আসবে। 

জানা যায়, জনবহুল এই রাজধানীতে আছে সচিবালয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস, মন্ত্রীদের অফিস, বিভিন্ন সরকারি দফতরের হেড অফিস, দূতাবাস, বিদেশি সংস্থার অফিস, বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যালয়, শপিং মল ছাড়াও আছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস। এতে করে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে নানা কাজে, নানা প্রান্তে তাদের যেতে হয়। যানজটে প্রতিদিন মানুষের হাজারো কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত কোনো কাজে বা শপিং করতে এলে রাতযাপন করার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। হোটেল-মোটেল থাকলেও নির্দিষ্ট স্থানে না থাকায় অনেককেই পড়তে হয় বিপাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সমস্যার সমাধান করতে নেওয়া হয়েছে এমন ধরনের নানা উদ্যোগ যাতে করে ঢাকায় আসা ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা পেতে পারেন। রাজউক সূত্রে জানা যায়, স্টেশনকেন্দ্রিক যাতায়াতের জন্য নেওয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। গাবতলী স্টেশনটি বুড়িগঙ্গা নদীর কাছাকাছি হওয়ায় নৌপথের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে জলাশয় সংরক্ষণ করে নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে। সেখান থেকে যেন অনায়াসে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারেন। এ ছাড়া টার্মিনালের ভিতর গড়ে তোলা হবে আবাসিক হোটেল ও মোটেল। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা রাত হয়ে গেলে যাপন করতে পারেন। আর অসুস্থ রোগীরা যেন দ্রুতই সেবা নিতে পারেন, সেজন্য নির্মাণ করা হবে হাসপাতাল। আর খাবারের জন্য ফাস্টফুড দোকানসহ থাকবে রেস্টুরেন্ট। ওই পরিকল্পনায় শপিং মল, গার্মেন্ট, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা চলছে। যেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা অনায়াসে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন। থাকবে পার্কিং ব্যবস্থা। যাতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা গাড়ি পার্কিং করতে পারেন। এ ছাড়া স্টেশনগুলোতে ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কার্যালয়, কমিউনিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা ও ফাঁকা জায়গা রাখা হবে। স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরা স্টেশনেও এসব করা হবে।

রাজউক জানায়, এ প্রকল্পের বিষয়ে ১০ জুন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ  থেকে রাজউক এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) এ বিষয়ে একটি রেকর্ড অব ডিসকাশন্স স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশে ধারণাটি নতুন বিধায় ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত নীতিমালা এবং নির্দেশিকাগুলো প্রণয়ন বা সংশোধন করা প্রয়োজন। এতে এমআরটি স্টেশনগুলোর সঙ্গে টিওডি বাস্তবায়নের বিষয়টি সমন্বয় করা যাবে; যা ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের ট্রানজিট স্টেশনভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিতসহ যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এদিকে মেট্রোরেলসহ অন্যান্য ট্রানজিট স্টেশনকেন্দ্রিক পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজউক। জাইকার অর্থায়নে ২০২৪ সালে প্রকল্পটি শেষ হবে। টিওডি সম্পর্কে রাজউক জানিয়েছে, এটি ঢাকা শহরের যানজট কমাতে ভূমিকা রাখবে। পথচারী ও পরিবেশবান্ধব মিশ্র ব্যবহার এবং উচ্চ জনঘনত্ব হবে টিওডি এলাকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাজউক আরও জানিয়েছে, সংস্থাটির খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (২০১৬-৩৫) এমআরটি লাইন টিওডি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য এমআরটির (লাইন ১, ৫ ও ৬) ১৫টি স্টেশন চিহ্নিত করা হয়েছে। মেট্রোরেল স্টেশনকেন্দ্রিক নতুন আবাসিক এলাকা তৈরি করতে চায় রাজউক। এতে করে নগরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। হাঁটা দূরত্বে স্টেশন থাকলে মানুষ সহজেই মেট্রোরেলে চড়ে গন্তব্যে যেতে পারবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর