মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

উৎকণ্ঠা বেপরোয়া ডাকাতদের নিয়ে

♦ পুলিশ সদর দফতরের ১০ নির্দেশনা ♦ তালিকা করছে হাইওয়ে পুলিশ চলবে অভিযান ♦ যানবাহনে বসানো হচ্ছে ডেস্ক ক্যামেরা সংযুক্ত থাকবে ৯৯৯ এর সঙ্গে

সাখাওয়াত কাওসার

উৎকণ্ঠা বেপরোয়া ডাকাতদের নিয়ে

হঠাৎ করেই অনিরাপদ হয়ে ওঠা মহাসড়কে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। দেশের সব কটি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক নিরাপদ করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে এরই মধ্যে পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে ১০ দফা বিশেষ নির্দেশনা। অন্যদিকে মহাসড়কে সাঁড়াশি অভিযানে নামার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ‘হাইওয়ে পুলিশ’। দেশব্যাপী হাইওয়ে পুলিশের ৭৩টি থানা এবং ফাঁড়ির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে জেলা ও আন্তজেলা ডাকাতের তালিকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাকাতি রোধে এবং মামলা মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো বিশেষ নির্দেশনায় পুলিশের সব ইউনিট নড়েচড়ে বসেছে বলে জানা গেছে। ডাকাত গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে হাইওয়ে পুলিশ। চলতি বছর মহাসড়কে ছয়টি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। বিশেষ করে গত ২ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে আসা ঈগল পরিবহনের এক নারী যাত্রীকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গণধর্ষণ ও যাত্রীদের মালামাল লুটের ঘটনা রীতিমতো তোলপাড় হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গাজীপুরের শ্রীপুরে গত ৬ আগস্ট তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর আগে গত ১১ মে আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন এবং ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ১৪ জানুয়ারি বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা সোনার তরী পরিবহনের দুই তরুণীও ডাকাত দলের সদস্যদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন।

গতকাল এ বিষয়ে কথা হয় হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি সদস্য এ বিষয়ে খুবই সতর্ক। ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সবগুলো বিষয় নিবিড়ভাবে তদারকি করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা অনেক উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এর প্রতিফলন দেশবাসী খুব শিগগিরই দেখতে পারবে। সচেতনতা বাড়াতে জনসাধারণের মধ্যে ২ লাখ লিফলেট এবং হাইওয়ে পুলিশের মোবাইল নম্বর সংবলিত ১ লাখ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক অযান্ত্রিক যানবাহন আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাম্প্রতিক অভিযানে প্রায় ২২ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, দূরপাল্লার গাড়িতে ডেস্ক ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ওই ক্যামেরায় থাকবে বিশেষায়িত ডিভাইস। এই ডিভাইসটি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। গাড়িটি কোনো বিপদে পড়লে ওই ডিভাইসে চাপ দিলেই সংকেত চলে যাবে ৯৯৯-এ। গাড়ির অবস্থান ঠিকের মাধ্যমে ৯৯৯ স্থানীয় থানার মাধ্যমে বিপদে পড়া গাড়ির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ ছাড়া ওই ডিভাইসের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থানও নির্ণয় করা যাবে। ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতি প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশের পাঁচটি রিজিয়নের ৫৪টি স্থানে পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে যাত্রীবাহী বাসের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। চালক ও হেলপারদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও মহাসড়কভিত্তিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং এবং ওপেন হাউস ডে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার পাশাপাশি রাতে মহাসড়কগুলোতে কমপক্ষে ৮০টি বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে এরই মধ্যে যৌথ অভিযান শুরু করা হয়েছে।

সূত্র আরও বলছে, গত ৪ আগস্ট  হাইওয়ে সদর দফতর থেকে প্রতিটি রিজিয়নকে ডাকাত দলের সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পরবর্তীতে একটি সমন্বিত তালিকা করে পাঠানো হবে পুলিশ সদর দফতরে। তবে বড় ধরনের একটি অভিযানের জন্য ইনকোয়ারি স্লিপের মাধ্যমে ডাকাতদের বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। তারা কারাগারে নাকি বাইরে সে বিষয়টি এ ধরনের তদন্তে বেরিয়ে আসছে। এর বাইরেও ডাকাতি রোধে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত স্টপেজের বাইরে যাতে যাত্রী তোলা না হয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত রুটের বাইরে যাতে কোনো বাস চলাচল না করে সে বিষয়টিকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, গত বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান মল্লিক ফখরুল ইসলাম। তিনি মহাসড়কের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা দেশের থানা এবং ফাঁড়িতে হাইওয়ে পুলিশের সদর দফতর থেকে বৃহস্পতিবার বিশেষ নির্দেশনা দেন।

পুলিশ সদর দফতরের ১০টি নির্দেশনা : কোনো ডাকাতি বা দস্যুতার ঘটনা ঘটলে এজাহারকারীর বক্তব্যের আলোকে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করতে হবে। এজাহারকারীর দেওয়া তথ্যে কোনো অসামঞ্জস্যতা দেখা গেলে তথ্য যাচাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাকাতির মামলায় পুলিশ সুপার বা মেট্রো ডিসি মামলা তদারকি করবেন। দস্যুতার মামলা হলে পুলিশ সুপার নিজে অথবা ন্যূনতম একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তা তদারকি করবেন। সাজা ভোগকারী ডাকাত ও ডাকাতি মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ তালিকা করতে হবে এবং তাদের অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। ডাকাতি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পার্শ্ববর্তী পুলিশ ইউনিটগুলোর সঙ্গে আন্তঃ যোগাযোগ ও সমন্বয় বৃদ্ধি এবং তথ্য বিনিময় করতে হবে। ঘটনার পরপরই সম্ভাব্য স্থানে আসামি গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেফতার করতে হবে। দস্যুতা, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলার কারণে বরখাস্ত হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে এবং তাদের অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। ডাকাতি ও দস্যুতা প্রতিরোধে সময়ে সময়ে একাধিক ইউনিট সমন্বিতভাবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে এবং যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ে শেষ করে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। গণমাধ্যমে ডাকাতি বা দস্যুতার সংবাদ প্রকাশ হলে তা দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্যের গরমিল দেখা গেলে তা যথাযথভাবে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকে ইউনিটের মিডিয়া ফোকাল পারসনের মাধ্যমে জানাতে হবে। পুলিশ সদর দফতর থেকে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ডাকাতি মামলা প্রতিরোধ সংক্রান্ত সাধারণ নির্দেশনাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর