শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁচ বছর পর গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রাবস্থায় স্থানীয় পত্রিকায় কাজের পাশাপাশি একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন খন্দকার আবুল কালাম আজাদ (৫৩)। এরপর ২০০৩ সালে নিজ এলাকায় ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেন ব্যবসা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে গ্রাহকদের জামানতের প্রায় ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে যান। সারা দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ৬০টি মামলা ও ৩৬টি পরোয়ানা নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর পলাতক থাকার পর খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানায়, আজাদ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে একটি পারিবারিক প্রতারণার বলয় গড়ে তুলেছিলেন। নিজে সভাপতি, দুই ভাই ও তাদের স্ত্রীদের বিভিন্ন পরিচালনা পর্ষদে বসিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। ২০০৫ সালে মেহেরপুরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পাল্টে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটি অতি সুকৌশলে উচ্চ মুনাফায় মানুষকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে।

উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএসের মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ। গ্রাহক বাড়ানোর জন্য চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে মানুষদের আকৃষ্ট করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৭ সালে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গ্রাহকরা ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখেন। এতে সঞ্চয়-আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা। মাঠপর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতার ব্যক্তির প্রায় ৮০০-এর বেশি কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদের কোনো প্রকার বেতন দেওয়া হতো না। গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখানো হতো। এমনকি বিভিন্ন জেলায় ভাড়া নেওয়া প্রতিষ্ঠানটির অভিজাত কার্যালয়ের মালিকদেরও কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি আজাদ। ভাড়ার টাকা তার প্রতিষ্ঠানে জমা করলে নির্ধারিত সময় পর তিন গুণ ফেরত পাবে প্রলোভন দিয়ে টাকা না দিয়ে তাদের অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যান। প্রতারণার টাকায় কুষ্টিয়ায় ১৫ বিঘা জমি, একটি ছয় তলা ভবন, একটি ইটের ভাটা এবং রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি কেনেন আজাদ। এ ছাড়া ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনেন। তার স্ত্রীর নামে ডাকঘরে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। এমনকি একটি ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা ঋণও নেওয়া আছে তার।

সর্বশেষ খবর