রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ৬২ জেলায়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ৬২ জেলায়

দেশের ৬২ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুজ্বর। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম বাদে সব জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমাতে ফ্লুইড অর্থাৎ তরল জাতীয় খাবার ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়ে হালনাগাদ হচ্ছে ডেঙ্গুর পকেট গাইডলাইন। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৯৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা দেশের চিকিৎসকদের জন্য ডেঙ্গুর পকেট গাইডলাইন হালনাগাদ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে সবচেয়ে জরুরি ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। ডেঙ্গুর চিকিৎসা গাইডলাইন বই প্রায় ৯০ পৃষ্ঠার। চিকিৎসকদের খুঁজে দেখার ঝামেলা কমাতে তালিকা করে তথ্য সন্নিবেশ করা হচ্ছে পকেট গাইডলাইনে। এ বছরের রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসায় বাজারে কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় প্রচলিত আছে যেমন প্লাটিলেট দেওয়া, প্লাজমা দেওয়া। প্লাটিলেট কমলে তা দেওয়া একদম অপ্রয়োজনীয় কাজ। এগুলো আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই। প্লাটিলেট ১০ হাজারে নামলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ রকম অসংখ্য রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে। ফ্লুইড ও অন্যান্য চিকিৎসা ঠিক থাকলে প্লাটিলেট কোনো বিষয় না।’

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসায় গাইডলাইন প্রকাশ করতে আজ রাজধানীর এক হোটেলে সোসাইটি অব মেডিসিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানে সারা দেশের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা যুক্ত থাকবেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে দেশের সুনামধন্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল দেশে আরও ৯১৮ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৩০ জন ও ঢাকারের বাইরের রয়েছেন ৩৮৮ জন। গতকাল মারা গেছেন ছয়জন। বর্তমানে দেশের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ২৪ জন। অন্যান্য বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ২৫১ জন। দেশে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৭০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৪ হাজার ১৯৬ জন। ঢাকা মহানগরে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৩১২ জন। মহানগর বাদে ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত গাজীপুরে ৫১১ জন, ফরিদপুরে ৪৫৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ৪৩৫ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৪ জন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন জেলার ৫৬৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৩ জন। চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৬৯ জন। কক্সবাজারে ১ হাজার ৭৫৩ জন। খুলনা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্যে যশোরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৪ জন। রাজশাহী বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭০২ জন। এর মধ্যে পাবনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৫ জন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৮২ জন ভর্তি আছেন। এর অধিকাংশ রোগী পাবনার রূপপুরের বাসিন্দা। রংপুর বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১২৭ জন। বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩৩ জন। এর মধ্যে পিরোজপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১৫ জন। সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯ জন। এই বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মহানগরীতে মারা গেছেন ১১৯ জন এবং এর বাইরে অন্যান্য জেলায় মারা গেছেন ৮০ জন। এর মধ্যে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ২৩ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে মারা গেছেন ১৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০ জন মারা গেছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত সাতজন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপে কিছু বিশেষ দিক আছে। এবার বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে এ বছর ঢাকার বাইরেও উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু সংক্রমণ হচ্ছে। এ দুটো দিক মিলিয়ে দেখলে সেটা খুব চিন্তার বিষয়ই। এটা শুধু এ বছরের জন্য নয়, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটা দেখতে হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় যে সামর্থ্য আমাদের রয়েছে তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না- এসব নিয়ে ভাবতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৩৫০ পৌরসভায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরায়ণ হলে এডিস মশা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে পৌরসভাগুলোতে নগরায়ণের সব বৈশিষ্ট্য থাকলেও  নগরকে বাসযোগ্য করে রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ কোনোটাই নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর