রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

টর্চ মোমের আলোয় চলে চিকিৎসা

রাহাত খান, বরিশাল

টর্চ মোমের আলোয় চলে চিকিৎসা

প্রতিষ্ঠার ৫১ বছরেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যায়নি বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গড়ে ওঠেনি নিজস্ব বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও। বিদ্যুৎহীন সময়ে টর্চ ও মুঠোফোন এবং মোমবাতির আলোয় চলে অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা। বিদ্যুৎবিভ্রাটে লিফটেও আটকা পড়েন রোগীরা। সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে আন্ডারগ্রাউন্ডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন পুড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের দুটি ব্লকে বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে বলে জানান পরিচালক। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।  ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বর্তমানে কাগজে কলমে ১ হাজার শয্যার হলেও গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় ২ হাজার। বর্তমানে একটি বাণিজ্যিক সংযোগে চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ। আগে মেডিকেল ফিডার নামে বিশেষ একটি লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বাণিজ্যিক লাইনে লোডশেডিং কিংবা বিভ্রাট হলে টর্চ আর মোমবাতির আলোই ভরসা। ছোটখাটো অস্ত্রোপচার হয় টর্চের আলোয়। এবার দীর্ঘমেয়াদে বৈদ্যুতিক সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালে। ২৫ অক্টোবর হঠাৎ হাসপাতালের ‘বি’ ব্লকে পঞ্চম থেকে নিচতলা পর্যন্ত এবং সবশেষ বুধবার ‘জি’ ব্লকের পঞ্চম থেকে নিচতলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার মশিউল আলম ফেরদৌস জানান, ১৯৬৮ সালে আন্ডারগ্রাউন্ড সংযোগ লাইনের মাধ্যমে হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিনেও পুরনো লাইন সংস্কার হয়নি। সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনটি পুড়ে যায়। এতে প্রথমে ‘বি’ ব্লক এবং পরে ‘জি’ ব্লকের পঞ্চম থেকে নিচতলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়।

এর ফলে মেডিসিন, গাইনি বহির্বিভাগ, আউটডোর, তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলায় সার্জারি ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ইউনিট, মহিলা মেডিসিন ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড, ইউরোলজি বিভাগ, মানসিক ওয়ার্ড ও রেডিওলজি ওয়ার্ড, গাইনি পেয়িং বেড, টিকাদান কেন্দ্র, সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব, বঙ্গবন্ধু ক্লাব ও যুব রেড ক্রিসেন্ট এবং জেনারেল স্টোরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় চার দিন ধরে সিটিস্ক্যান, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ নিরীক্ষাও বন্ধ।

শুক্রবার রাতে ‘জি’ ব্লকের সার্জারি ইউনিটে রোগীদের অন্ধকারে দেখা গেছে। কেউ টর্চ কিংবা মুঠোফোন আবার কেউ মোমবাতির আলোয় সেবা করছেন রোগীর। ডাক্তার-নার্সদেরও মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে।

সার্জারি-২ ইউনিটের প্রধান সেবিকা কর্মকর্তা রিতা বাড়ৈ জানান, বুধবার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের আলোয় কাজ করতে হয়। অন্ধকারে ওয়ার্ডে চুরি বেড়েছে। এতে রোগীর পাশাপাশি নার্সেরাও নিরাপত্তাহীন।

একই ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সৈকত জানান, জখম রোগীরা সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন। তাদের জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের টর্চ কিংবা মোমবাতির আলোয় অস্ত্রোপচার করতে হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, পুরনো লাইন পুড়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে। তারা আগামী দুই দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে একটি জেনারেটর দিয়ে অস্ত্রোপচার থিয়েটারসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। জ্বালানির সীমাবদ্ধতা থাকায় সব সময় জেনারেটর চালানো যায় না।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম বলেন, বন্যার পানিতে আন্ডারগাউন্ড লাইনের চারটি ফেজ পুড়ে গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন বাদ দিয়ে ভবনের ভিতর থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ কাজে প্রায় ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। আগামী সপ্তাহে হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর