মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ছাই থেকে স্বর্ণ মেলে চারিগ্রামে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

ছাই থেকে স্বর্ণ মেলে চারিগ্রামে

‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’- এই প্রবাদ বাক্য বাস্তবে রূপ দিয়েছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রামের কয়েক শ পরিবার। প্রায় ২০০ বছর ধরে এ এলাকার লোকজন ছাই থেকে স্বর্ণ বের করে আনছেন। তারপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে স্বর্ণ বাজারজাত করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই লোকজন ছাই থেকে স্বর্ণ বের করার কাজে ব্যস্ত। কেউ আগুনে ছাই পোড়ানোর কাজ করছেন, আবার কেউ পানিতে ছাই ধোয়ার কাজে ব্যস্ত। কারও বসে থাকার সময় নেই। চারিগ্রামের শফিকুল ইসলাম বিল্টু জানান, তার পূর্বপুরুষের মূল ব্যবসাই ছিল ছাই থেকে স্বর্ণ বের করে বাজারে বিক্রির। তারা এই কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই এ কাজে সচ্ছলতা পেয়েছেন। তিনি বলেন, গ্রামের কয়েক শ পরিবার এ পেশায় জড়িত। কীভাবে এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস কেউ বলতে পারছেন না। তবে এলাকার প্রবীণদের বক্তব্য, এলাকার অনেকে ঢাকায় স্বর্ণের দোকানে কাজ করতেন। তারাই এখানে ছাই থেকে স্বর্ণ বের করার ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন।

চারিগ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছালি মাটির ব্যবসা করেই (ছাই থেকে স্বর্ণ বের করা) আমাদের সফলতা এসেছে। বর্তমানে ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। এ কাজ করে তাদেরও সংসার চলছে।’

তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বর্ণের দোকানের ছাই কিনে এনে পানিতে ধুয়ে সোহাগা, পুনট, সিসা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চান্দি তৈরি করা হয়। এরপর নেট্রিক অ্যাসিড দিয়ে প্রক্রিয়া শেষে চারিগ্রাম বাজারে মহাজনের কাছে বিক্রি করেন। যখন যে রকম বাজার দর থাকে সেই রকম দামই দেন মহাজনরা। বর্তমানে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দিচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা। বাজারে প্রায় ১০০ স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এসব স্বর্ণ শতভাগ খাঁটি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার লোকজন কিনতে আসেন। তবে বর্তমানে লাভ খুব কম। মালিপাড়ার কুটি মিয়া ও মো. মোহর আলী বলেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে সততা না থাকায় প্রায়ই লোকসানে পড়তে হচ্ছে। স্বর্ণের দোকানে ৫০ ভরি স্বর্ণের কাজ হয়েছে বললেও ছাই থেকে সে হিসাবে স্বর্ণ বেব হয় না। ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ার কারণে চড়া মূল্যে ছাই কিনে লাভ হয় না। এ কাজে ব্যবহৃত সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এ কাজ করতে তাদের কোনো ধরনের সমস্যা নেই। তবে সরকারি একটি নীতিমালা থাকলে ভালো হতো বলে তারা জানান। চারিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন দেওয়ান বলেন, ‘চারিগ্রাম ও গোবিন্দল গ্রামে প্রায় ৩ হাজার পরিবার এ পেশায় জড়িত। বর্তমানে ব্যবসা মন্দা থাকায় অনেকে ভিন্ন পেশায় যাচ্ছেন। তার পরও ছালি মাটির ব্যবসা এ এলাকায় টিকে থাকবে।’

সর্বশেষ খবর