রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কনকনে শীতেও জমজমাট লিট ফেস্ট

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

কনকনে শীতেও জমজমাট লিট ফেস্ট

কনকনে শীতেও গতকাল তৃতীয় দিনের ঢাকা লিট ফেস্ট ২০২৩ সাহিত্যপ্রেমীদের আগমনে জমজমাট ছিল। শীতের পোশাকে আবৃত হয়েই সাহিত্যের মিলনমেলায় প্রাণের সঞ্চার ঘটান দেশ-বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও লেখকরা। বিভিন্ন সেশনের মধ্য দিয়ে তারা গেয়েছেন সাহিত্যের গুণগান। একে অপরের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন আগামীর ভাবনা।

ঔপনিবেশিকতার বেড়াজাল থেকে বর্তমানের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নতুন চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা থেকে নারী নির্মাতা, গল্পের উপাদান, নাটকের উপাদান, বইয়ের অনলাইন বৈশ্বিক বাজারসহ নানা বিষয় নিয়ে এদিনের বিভিন্ন সেশনে আলোচনা করেন সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা। সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ শীর্ষক সেশনে রিফাত মুনীরের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বুকারজয়ী ভারতীয় ঔপন্যাসিক গীতাঞ্জলি শ্রী এবং অনুবাদক ডেইজি রকওয়েল। নিজের বই ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ বিষয়ে গীতাঞ্জলি শ্রী বলেন, চারপাশে সব সময়ই অনেক কণ্ঠস্বর ঘিরে আছে আমাদের। আমরা নিজেরাও বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রকাশ করি আলাদা আলাদা স্বরে। এই বইয়েও পৃথক পৃথক

অনেক কণ্ঠের বয়ান রয়েছে। আমাদের খুঁজে পেতে হবে নিজের স্বর আর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা। এতে আমাদের সাহায্য করবে। ডেইজি রকওয়েল হিন্দি ও উর্দু ভাষার সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। তিনি ‘টুম্ব অব স্যান্ড’-বইটিরও অনুবাদক। এদিকে, ভাস্কর নভেরা মিলনায়তনে কাইজার হকের দি ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার, সাদ জেড হোসেনের দি লাস্ট সিইও ও আবীর হকের লাভ ইন দি টাইম অব কম্পোস্টিং প্রদর্শিত হয়। একই মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির বাংলা’  নিয়ে আলোচনায় ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। কবি কামাল চৌধুরী বলেন, আজ রাজনৈতিক মতবিরোধ ও সামাজিক অবক্ষয় এবং সাম্প্রদায়িকতার কারণে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে। সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে সবাইকে নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সংস্কৃতি চর্চার যে জায়গাগুলো তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। দিনের অন্য একটি সেশনে ইলোরা হালিম চৌধুরীর এথিক্যাল এনকাউন্টার বইয়ের আলোচকরা বলেন, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নারীর জীবন, বয়ান এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন কীভাবে তা ভাবতে হবে। দীর্ঘদিন চুপ ছিলেন যে নারীরা তারা বর্তমানে সামনে আসছেন। নিজেদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন নিয়ে কথা বলছেন। বিষয়টি বাংলা উপন্যাস, সিনেমা, নিবন্ধে কীভাবে তুলে আনবেন সেই প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে হবে। এ ছাড়া দুপুরে একাডেমি প্রাঙ্গণে নারী অধিকার কর্মী মাহফুজা মালার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে কথা বলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টারের গবেষণা সহযোগী শ্রাবস্তী রায় নাথ, পথচলা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা মনীষা মীম নিপুণ, নারীবাদী কর্মী মারওয়া কাজী মোহাম্মদ, বাল্যবিয়ে রোধকর্মী সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। এই সেশনে বক্তারা বলেন, সেক্স নেওয়ার জিনিস। এই নেওয়াটা পুরুষ করবে আর নারী দেবে- এটাই প্রচলিত সমাজে। এখানে নারীর কতটুকু সম্মতি আছে সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। পরিবার থেকে এ বিষয়ে কথোপকথন জরুরি। আমাদের পরিবার বা সমাজে যৌনশিক্ষা নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয় না। শিশুরা পপ কালচার, পর্নোগ্রাফি থেকে যৌন বিষয়গুলো নিয়ে জানে। আমাদের পরিবারে এ বিষয়ে আলোচনার কোনো জায়গা নেই। অন্যদিকে, ‘মিশন টু মার্স : ওয়ান্ট টু গো টু দি রেড প্লানেট?’ শীর্ষক সেশনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক আবদুল্লাহিল কাফি বলেন, দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ক্যামেরা, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র, চশমার লেন্স এমনকি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারে স্পেইস ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা স্পেইস ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে সহায়ক নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উন্নয়ন প্রয়োজন।

 

 

সর্বশেষ খবর