সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বসুন্ধরার কম্বল পেলেন উত্তরের ১৩ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বসুন্ধরার কম্বল পেলেন উত্তরের ১৩ হাজার মানুষ

বসুন্ধরা গ্রুপের কম্বল উপহার পেয়ে সবার মুখে হাসি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জানুয়ারিতে গোটা উত্তরে জেঁকে বসেছিল তীব্র শীত। হিমালয় ঘেঁষা এই অঞ্চলের মানুষ এ সময় জবুথবু অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। দারুণ কষ্টে একটুখানি সহায়তার আশায় তাঁরা দিন গুনছিলেন। ঠিক তখনই অসহায় মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের আয়োজনে বসুন্ধরা এই মানুষগুলোর হাতে শীতবস্ত্র তুলে দিয়ে তাঁদেরকে যেমন উষ্ণতায় ভরিয়ে দিয়েছে, তেমনই তাদের মুখে ফুটিয়েছে অনাবিল হাসি।

জানুয়ারির ১৬ তারিখ, শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানের নেতৃত্বে কম্বল নিয়ে শুভসংঘ দল ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সঙ্গে ছিলেন জীবন, রাফি, আবিরসহ আরও কয়েকজন। সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় শুভসংঘ দল দিনাজপুরে পৌঁছে। পথে বগুড়া, গোবিন্দগঞ্জ ও দিনাজপুরের শুভসংঘের বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ। দিনাজপুরে পৌঁছেই পরের দিন শুরু হয়ে যায় কম্বল বিতরণ। এ সময় কুয়াশায় দুই হাত দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সকাল ৭টায় প্রথম কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় দিনাজপুর জেলার ছয়টি উপজেলার সাতটি স্থানে ১ হাজার ৫০০ শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেয় শুভসংঘ। কম্বল হাতে পেয়ে অসহায় শীতার্ত মানুষগুলোর মলিন মুখে হাসি ফিরে আসে। বিরল উপজেলার একটি এতিমখানায় কম্বল বিতরণের মধ্য দিয়ে রাত ১০টায় শেষ হয় প্রথম দিনের কম্বল বিতরণ। দ্বিতীয় দিন দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় কম্বল বিতরণ করা হয়। জেলার চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুরের বিভিন্ন জায়গায় দেড় হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। দুই দিনে দিনাজপুরের তিন হাজার মানুষের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে কম্বল তুলে দিয়ে শুভার্থীরা রওনা হন জয়পুরহাটের দিকে। পরের দিন শুরু হয় জয়পুরহাটে কম্বল বিতরণ। জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলায় পৃথক আয়োজনে এক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল হাতে পেয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রাণভরে দোয়া করেছেন সবাই। জয়পুরহাট কালেক্টরেট মাঠে সকাল ১০টায় কম্বল নিতে আসেন ৪০০ দরিদ্র মানুষ। সেখানে ছেলের সঙ্গে রিকশায় চড়ে কম্বল নিতে এসেছিলেন শতবর্ষী বৃদ্ধা মোহিনী বালা। কম্বল পেয়ে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন শীত কোনো দিন অনুভব করিনি। বৃদ্ধ মানুষের শীত তো আরও বেশি। শীতে করুণ অবস্থা হলেও কেউ সাহায্য করেনি। বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া কম্বল পেয়ে হামার খুবই উপকার হলো। শীতে ঘুম আসে না। কম্বলের উশুমে এখন থেকে ভালো করে ঘুম পারা পারমো। ভগবান তোমাগেরে মঙ্গল করবে।’ কালেক্টরেট মাঠে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরার মতো দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ জয়পুরহাটের হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষদের জন্য শীত নিবারণে এক হাজার কম্বল উপহার দেওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সফলতা কামনা করছি। আশা করছি, আগামী দিনেও মানুষের কল্যাণে তারা এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’ এরপর নওগাঁয় বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় দীঘা, বক্তারপুর ও বরুণকান্দি হাফেজিয়া কওমি মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআইর পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। নওগাঁয় কম্বল বিতরণ শেষ করে শুভসংঘ দল রওনা হয় রাজশাহীর পথে। মাঝখানে পত্নীতলা উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী মাছুমা আক্তারকে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির সহায়তা তুলে দেওয়া হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে রাজশাহীতে শুরু হয় কম্বল বিতরণ। পদ্মা নদীর একেবারে পার ঘেঁষে গড়ে ওঠা গোদাগাড়ীর পিরিজপুর গ্রামের একটি আমবাগানে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষের জটলা। সবাই আসেন কম্বল নিতে। এরই মধ্যে পদ্মার দিক থেকে হু হু করে বাতাস বয়ে যাওয়ায় শীতে কাঁপছিলেন বৃদ্ধ কয়েকজন নারী-পুরুষ। পদ্মার হু হু বাতাস আর তীব্র ঠান্ডায় কাবু হওয়া ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কম্বল হাতে পেয়েই জড়িয়ে নেন নিজের শরীরে। রাজশাহীতে মোট এক হাজার অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয় কম্বল। পরের গন্তব্য ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে ১৫ বীরাঙ্গনাসহ মোট এক হাজার মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। শুভসংঘ দল ফের রওনা হয় ৩০০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড়ের পথে। প্রথমে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে তেঁতুলিয়া উপজেলার ডিমাগছ ও তিরনইহাট এলাকা, আটোয়ারী উপজেলার বিএম কলেজ, বোদা উপজেলার একুশ স্মৃতি পাঠাগার চত্বর, দেবীগঞ্জের ধনমন্ডল ও পঞ্চগড় সদরের চাকলাহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কম্বল বিতরণ করা হয়। সেখানে কম্বল বিতরণ শেষ করে শুভসংঘের গন্তব্য ছিল নীলফামারী। এখানে এক হাজার মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ শেষ করে শুভার্থীরা ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার কম্বল বিতরণ করেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে এক হাজার মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা উত্তরবঙ্গের ৯ জেলাসহ এবং ঢাকার নারায়ণগঞ্জ মিলে মোট ১৩ হাজার কম্বল বিতরণ করেছি শুভসংঘের মাধ্যমে। এতিম শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, বীরাঙ্গনাসহ সব মানুষের কাছে আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের এই উপহার পৌঁছে দিয়েছি শুভসংঘের মাধ্যমে। সবাই আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের জন্য দোয়া করেছেন। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় আমাদের এই ভালো কাজের ধারা ভবিষ্যতেও অক্ষুণ্ণ রাখব।’

সর্বশেষ খবর