কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল বিকালের দিকে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে খুব একটা লোক সমাগম ছিল না বললেই চলে। তবে, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই বইপ্রেমীদের পদচারণায় ভিন্ন এক রূপ নেয় বইমেলা। সন্ধ্যার দিকে মেলায় আগতদের বেশির ভাগের হাতেই শোভা পেয়েছিল প্রিয় লেখকের বই। রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে মেলায় আসেন সেলিম হোসেন হৃদয় নামের এক তরুণ শিক্ষার্থী। এতদূর থেকে মেলায় আগমনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তরুণ শিক্ষার্থী হৃদয় বলেন, প্রতিবারই মেলায় আসি। বই পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে। এ ছাড়া আমাদের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে বেশি সময় লাগে না। কি ধরনের বই কেনা হলো জানতে চাইলে তরুণ এই শিক্ষার্থী বলেন, বেশ কয়েকটি উপন্যাস কিনেছি। তিনি জানান, তার নির্দিষ্ট কোনো পছন্দের লেখক নেই। যার বই ভালো লাগে তার বই-ই তিনি পড়েন। সময় পেলে আরেকদিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে দলবেঁধে মেলায় আসবেন বলেও বিদায় বেলায় জানালেন এই বইপ্রেমী। এদিকে, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেটটি বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ রাজধানীর কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা, মৌচাক এলাকা থেকে আগত বইপ্রেমীরা। কারণ এসব এলাকার মানুষের কাছে মেলায় প্রবেশের সহজ পথ হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেটটি। কিন্তু, এই গেটটি বন্ধ থাকার কারণে অনেক বইপ্রেমী দর্শনার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ না করে ফিরে গেছেন। রাজধানীর শান্তিনগর থেকে এসে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেটে পুলিশি বাধার মুখে মেলায় প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যান সোহেল রানা শান্ত। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, একুশের চেতনার জন্য বইমেলা। কিন্তু, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেটটি পুলিশ খোলেনি। দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশের গেট কিংবা টিএসসি সংলগ্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে বলে। অনেক অনুরোধ করার পরও পুলিশ গেটটি খোলেনি। এই গেটটি খোলা রাখার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মী, প্রকাশক, বিক্রয়কর্মী, ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মেলা শুরুর পর থেকে জোর দাবি জানিয়ে এলেও পুলিশ কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেটটি না খোলার বিষয়ে বাংলা একাডেমির কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলায় জনসাধারণের অবাধে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমরাও চাই ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেটটি খোলা রাখা হোক। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য মতে, গতকাল ষষ্ঠ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১২১টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১৬টি, উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ পাঁচটি, কবিতার ৩২টি, গবেষণার একটি, ছড়ার দুটি, শিশুসাহিত্য তিনটি, জীবনী আটটি, রচনাবলি দুটি, মুক্তিযুদ্ধের তিনটি, নাটকের একটি, ভ্রমণের দুটি, ইতিহাস পাঁচটি, ধর্মীয় তিনটি, অনুবাদ একটি ও অন্যান্য ১৩টি।
মূল মঞ্চ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : কাজী রোজী এবং স্মরণ : দিলারা হাশেম’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনায় অংশ নেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান ও শাহনাজ মুন্নী। সভাপতিত্ব করেন অসীম সাহা।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, ফারুক মাহমুদ এবং আতাহার খান। আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম এবং অনন্যা লাবনী। এ ছাড়া ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন আজগর আলীম, আবুবকর সিদ্দিক, বিমানচন্দ্র বিশ্বাস, রহিমা খাতুন, শান্তা সরকার।