মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

নষ্ট হচ্ছে উপহারের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স

কাজে আসছে না ১৬৩ কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দে রয়েছে সংকট নিয়ন্ত্রণে সমস্যা বলছেন চালকরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নষ্ট হচ্ছে উপহারের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স

চুয়াডাঙ্গায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে দেড় কোটি টাকার লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও চালক না থাকায় দুই বছরেও কাজে আসেনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সটি। সিভিল সার্জন কার্যালয় চত্বরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে বিশেষায়িত এ অ্যাম্বুলেন্স। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ভারত সরকারের দেওয়া দেড় কোটি টাকা মূল্যের আইসিইউ সুবিধা-সংবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি।

শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, দেশের ৬৪ জেলায় দেওয়া ১৬৩ কোটি টাকা মূল্যের ১০৯টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে অযত্নে। অবহেলায় ধুলার স্তূপে নষ্ট হচ্ছে আইসিইউ সুবিধা-সংবলিত এ অ্যাম্বুলেন্স। দুই বছরেও কাজে লাগানো যায়নি ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স। এগুলো পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। বাকি ৬৯টি মাসে দু-একদিন সাধারণ রোগী বহন করছে।

জানা যায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশে আসেন। তখন ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের সরকারপ্রধান। এসব অ্যাম্বুলেন্সে একটি আইসিইউ পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, জরুরি ওষুধ, ইনকিউবেশন সেট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সাকশন মেশিন, নেবুলাইজার মেশিন, ক্যাথেটার, বিপি স্টেথো, পালস অক্সিমিটার, কার্ডিয়াক মনিটর পালস, স্যাচুরেশন, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র, মনিটর ব্যবস্থা, পথেই রোগীর হৃৎস্পন্দন ভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া (ভিটি) এবং ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন (ভিএফ) সুবিধা থাকে। ওই বছর ধাপে ধাপে এ অ্যাম্বুলেন্সগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে ভারত। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সগুলো সচল করতে চালক এবং তেলের বরাদ্দ নিয়ে রয়েছে সংকট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. শেখ দাউদ আদনান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের তেলের বরাদ্দ যেসব হাসপাতাল চেয়েছিল তা দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো সচল রাখতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চালক নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।’ রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ১১টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতটি অ্যাম্বুলেন্স এখনো ব্যবহার করা যায়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে এ অ্যাম্বুলেন্সকে কখনো কখনো রোগী বহন করতে দেখা যায়। এসব হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ-ভারতের পতাকা-সংবলিত অ্যাম্বুলেন্সগুলোয় খোলা আকাশের নিচে ধুলাবালির আস্তর জমেছে। দীর্ঘদিন একই জায়গায় পড়ে থাকায় ব্যাটারি অকেজো হয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্স আকারে বড় হওয়ায় অনেক চালক এটি নিয়ে বের হতে চান না। অ্যাম্বুলেন্সগুলো শুধু ঢাকার ভিতরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অ্যাম্বুলেন্সের জন্য দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়। এমনিতেই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সের সংকট। এসব অ্যাম্বুলেন্সেও লেগেছে সংকটের আভাস।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রোগী পরিবহনের জন্য উপহার হিসেবে পাওয়া লাইফ সাপোর্টসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু এগুলো কাজে আসছে না। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজবন্দি অবস্থায় আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সগুলো রোগী পরিবহনের কোনো কাজে আসছে না। ব্যাটারি প্রায় অকেজো হওয়ার পথে। তিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজে রাখা আছে। বর্তমানে এগুলো দিয়ে রোগী পরিবহন করা হচ্ছে না। আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পবিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান বলেন, ‘ভারতীয় অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে রাখা আছে। এ অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিয়ে রোগী পরিবহন করতে চালকের বেশ সমস্যা হয়। চালক বলছেন, চালাতে গিয়ে এটির নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়। যে কারণে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে না।’ কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অরূপ পাল বলেন, করোনা টিকা কার্যক্রমে উপহারের অ্যাম্বুলেন্স কাজে লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এটি চালানো হয় না। এ ছাড়া আমাদের এখানে আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স আছে।’ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, উপহারের বিশেষ এ অ্যাম্বুলেন্সটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সড়কে চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়। করোনার সময়ে টিকা পরিবহন ও মেডিকেল টিমের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপর যখন রোগী পরিবহনের কাজে ব্যবহার শুরু হলো এর চালক ও রোগীরা এতে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় এ গাড়িটি বেশি লাফায়। এতে রোগী ও রোগীর স্বজনরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই অ্যাম্বুলেন্সটি বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে না।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আমাদের প্রতিনিধি- জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা এবং মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া]

সর্বশেষ খবর