পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন রোমানিয়ায়। তবে কর্মী যাওয়া শুরু হতে না হতেই এই শ্রমবাজার নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেছে। কারণ বাংলাদেশিরা ইউরোপে গিয়ে অবৈধভাবে তৃতীয় কোনো দেশে চলে যাচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোমানিয়ার নিয়োগকর্তারাও। অসন্তুষ্ট রোমানিয়ার দূতাবাস ঢাকায় ভিসা ইস্যু করার কনস্যুলার সেবা রাতের আঁধারে গুটিয়ে নিয়েছে। সহসাই আর দিল্লি থেকে ঢাকায় এই ভিসা ইস্যুর সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। রোমানিয়ার জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত জনশক্তি রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশিদের পালানো বন্ধ করার উপায় বের করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় এ ধরনের কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ফলে রোমানিয়ার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ। রোমনিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো শুরু করা জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ (বিডি)-এর মালিক লোকমান শাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্য দেশের ভূমি ব্যবহার করে অবৈধভাবে তৃতীয় একটি দেশে চলে যাওয়া ঘৃণ্য একটি অপরাধ। এর সঙ্গে দেশের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় শ্রমবাজারের পাশাপাশি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের। তিনি বলেন, পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়াতে ২০০৭-০৯ সাল পর্যন্ত আমরাই সর্বপ্রথম বৈধভাবে শ্রমিক প্রেরণ করেছিলাম। ২০০৯ সালের পর পরই বাংলাদেশি কর্মীদের পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতার কারণে রোমানিয়া সরকার দেশটিতে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন থেকেই বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে এই পালানোর প্রবণতা বন্ধ করার জন্য বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন একমাত্র কঠোর আইনের মাধ্যমেই পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে যেসব বৈধ এজেন্সি রোমানিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবাইকে অবৈধ অভিবাসনের বিপক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। তবেই এই শ্রমবাজার ধরে রাখা সম্ভব হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোমানিয়া বাংলাদেশিদের জন্য ২০২০ সালে ৫৮০টি, ২০২১ সালে ২ হাজার ৮৬৯টি আর ২০২২ সালে ১২ হাজার ৯৬০টি ভিসা দিয়েছে। তবে সেখানে এখন অবস্থান করছেন মাত্র ৩ হাজার ৯৬ জন বাংলাদেশি। বেশির ভাগই রোমানিয়া থেকে তাদের কাজের মেয়াদ শেষ না করেই অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে রোমানিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সূত্র জানায়, রোমানিয়ায় কাজের জন্য যাওয়া মোট বাংলাদেশিদের মাত্র ৫ শতাংশ এখন রোমানিয়ায় আছে। বাকিরা সবাই অন্য কোনো না কোনো দেশে চলে গেছেন। জানা যায়, রোমানিয়ায় অনেক কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ২০২৩ সালে রোমানিয়া ১ লাখ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখসংখ্যক কর্মী বাংলাদেশ থেকে নিতেও আগ্রহী বলে জানিয়েছিল দেশটি। বিশেষ করে নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে সেখানে কর্মীদের সুযোগ আছে রোমানিয়ায়। কাজের মেয়াদ শেষ না করেই বাংলাদেশিদের ইউরোপের অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে রোমানিয়া। বাংলাদেশে নিযুক্ত রোমানিয়ার অনাবাসি রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েলা সেজোনভ টেন সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ কর্মী রোমানিয়ায় পৌঁছে ইউরোপের অন্য দেশে চলে যান। এতে রোমানিয়া সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিসার অপব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এরপরও এই প্রবণতা বন্ধ হয়নি। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে রোমানিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই নানান কূটনৈতিক চেষ্টার মাধ্যমে ২০১৭ সালে আবারও রোমানিয়ায় কর্মী প্রেরণের দ্বার উন্মুক্ত হয়। ওই সময় কর্মী যাওয়া শুরু হলেও তা ছিল অত্যন্ত সীমিত। ২০২১ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন রোমানিয়া সফর করেন। সফরকালে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোগদান লুসিয়ান অ্যারেস্কুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মূলত এই সফরের পর থেকেই রোমানিয়ায় কর্মী পাঠানোর পথ উন্মোচন হয়। ২০২২ সালে রোমানিয়ার কনস্যুলার টিম ঢাকায় এসে প্রায় ৫ হাজার কর্মীকে ভিসাও দেয়। এ কার্যক্রম চলতি বছরও চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই এই ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে চলে যায় রোমানিয়ার কনস্যুলার টিম। এখন আগের মতো নয়াদিল্লি থেকে কঠোর প্রক্রিয়ায় ভিসা নিতে হবে বাংলাদেশিদের, যেটা অনেকটাই অনিশ্চিত।
শিরোনাম
- মিরাজের ঘূর্ণিতে তিনদিনেই জিতল বাংলাদেশ
- চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিত
- প্রিপেইড গ্যাস মিটার নিয়ে প্রতারণা এড়াতে তিতাসের সতর্কবার্তা
- শিল্পীদের মেধাসম্পদ সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার : শিল্প উপদেষ্টা
- সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- ১১৯তম প্রাইজ বন্ডের ড্র, প্রথম বিজয়ী নম্বর ০২৬৪২৫৫
- রাজধানীর উত্তরায় ঢাবির বাসে হামলা, গ্রেফতার ৫
- প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলার আবেদনকারীকে হুমকির অভিযোগ
- এক ঠিকানায় মিলবে সব ‘নাগরিক সেবা’
- এনসিপি কোনো নির্বাচনি জোটে যাবে না : নাহিদ
- দেশে শ্রমিক সমাজ সবচেয়ে অবহেলিত : রিজভী
- কালকিনিতে হাতকড়াসহ পালানো আসামি গ্রেপ্তার
- চট্টগ্রামে দুই বন্ধুর ‘ইয়্যামেজিং’
- ১৪ পুলিশ সুপারকে বদলি
- শিশু আছিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন তিন চিকিৎসক
- ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’, অডিওটি শেখ হাসিনার
- তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃত রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায় ফিরতে হবে: এ্যানি
- আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ে মতামত না দেওয়ায় ইশরাকের গেজেট প্রকাশ ইসির
- চিন্ময় দাসের জামিন হাইকোর্টে
- ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি করব, তাদের চটাব না’
রোমানিয়ায় শ্রমবাজারের স্বপ্নভঙ্গ
ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার রুট বানিয়েছে অনেকে, বন্ধ হয়ে গেল ঢাকার কনস্যুলার সেবা, কঠোর আইনের বাস্তবায়ন চায় বৈধ জনশক্তি রপ্তানিকারকরা
জুলকার নাইন
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর