মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সরগরম সিটি নির্বাচনের মাঠ

নৌকাকে হারিয়ে জয়ের স্বপ্ন জাপা ইসলামী আন্দোলনের

গাজীপুর

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। নৌকায় জোয়ার সৃষ্টি হবে। জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেছেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং মানুষ যদি পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, তাহলে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আমি বিজয়ী হব ইনশা আল্লাহ।’ আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচনে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, মানুষ ভোট দিতে আসতে পারলে ইসলামী আন্দোলন অবশ্যই বিজয়ী হবে।’ এদিকে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা পেতে হাই কোর্টে রিট করেছেন। অপরদিকে ইভিএমের ত্রুটি সারাইয়ে শুরু হয়েছে ট্রাবল শুটিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।

আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান বলেন, ‘গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ আছে। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। গাজীপুরে নৌকার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হবে। সিটির অধিবাসীরা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবেন।’

গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, এই সিটিতে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রধান বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়ে গেছে। মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেতে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও মনোনয়নপত্রের বৈধতা মেলেনি। এমতাবস্থায় নৌকার বিপরীতে মানুষ লাঙ্গলেই ভোট দেবে বলে প্রত্যাশা করেন নিয়াজ উদ্দিন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং মানুষ যদি তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, তাহলে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আমি বিজয়ী হব ইনশা আল্লাহ।’

এম এম নিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, তিনি সচিব থাকা অবস্থায় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক বড় বড় কাজ করিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিটি করপোরেশনের জন্য ফান্ড আনতে বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে অনেক জানাশোনা আছে তার। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারবেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। আমি জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব।’ ২৫ মে সিটি নির্বাচনে নগরবাসী তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

অপরদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে, মানুষ ভোট দিতে আসতে পারলে অবশ্যই তার দল জয়ী হবে। আর নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আলম মামুন, বিএনপি পরিবারের সদস্য সরকার শাহনুর ইসলাম রনি, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, মো. হারুন অর রশীদ মেয়র পদে লড়ছেন। তারা সবাই নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে মনে করেন। ২৫ মে ইভিএমের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে নয়জন মেয়র প্রার্থী, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৭৬ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ ৮ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজই পরিষ্কার হবে কে কে থাকছেন নির্বাচনী মাঠে।

ইভিএমের ত্রুটি সারাইয়ে ট্রাবল শুটিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে ইভিএমের ত্রুটি চিহ্নিতকরণ এবং তাৎক্ষণিক সারাই করতে ৫৫০ ট্রাবল শুটিং কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং অফিসার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শনিবার তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে শুটিং কর্মকর্তা থাকবেন। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার থেকে এসব কর্মকর্তা নির্বাচন করা হয়েছে। তারা কেন্দ্রের ইভিএমের ত্রুটি চিহ্নিতকরণ এবং তাৎক্ষণিক সারাই করতে কারিগরি সহায়তা করবেন। ২০০ জনের প্রতিটি ব্যাচকে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শনিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান। ১৪ থেকে ২২ মে পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ ১ হাজার ২০০ ভোট কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

আজ ৮ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামীকাল ৯ মে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন। ২৫ মে ভোট। নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ৪৮০। সবগুলো কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএমে। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা, যার মাধ্যমে পুরো নির্বাচন মনিটরিং করা হবে।

সর্বশেষ খবর