শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
বরিশাল

দুই প্রার্থীর অভিযোগ পক্ষপাতিত্বের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। একই কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে রিটার্নিং কমকর্তার প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের কাছে সব প্রার্থী সমান বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এদিকে বিধি ভঙ্গের আশঙ্কায় গতকাল থেকে নির্বাচনী অফিস এবং নিজ বাসা ছাড়া বাইরের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছেন নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। গত বুধবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক সভায় জেপির সমর্থন পান তিনি।

আগামী ১২ জুনের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতীক বরাদ্দ দেবেন ২৬ মে। তখন থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। এর আগেই নানা কৌশলে সভা সমাবেশ মোটর শোভাযাত্রা, গণসংযোগসহ অবিরাম নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সব প্রার্থী কমবেশি প্রচারণা চালালেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দিকেই দৃষ্টি সাধারণ ভোটারসহ গণমাধ্যমের। তিনি কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা গণসংযোগে গেলে চোখ এড়ায় না কারও। তার নির্বাচনী প্রচারণার বহু ছবিও প্রচার-প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। সব শেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর চৌমাথা এলাকায় জেপির (মঞ্জু) কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এক সভা করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। সভায় সিটি নির্বাচনে জেপি নেতারা নৌকার সমর্থন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম।প্রার্থীর সহধর্মিণী লুনা আবদুল্লাহও নগরীর বিভিন্ন বস্তিসহ সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। তারসহ নৌকা প্রতীক দিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে জনসাধারণের মাঝে বিতরণরত গণসংযোগ, নৌকার পক্ষের মিছিলের ভিডিও ফুটেজ এবং নৌকা প্রার্থীর বিভিন্ন গণসংযোগ, সভা-সমাবেশের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্মীরা প্রশ্ন রেখেছেন এটা কি আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়? তাদের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেয় না কেন সেই প্রশ্ন গণমাধ্যমের কাছে রেখেছেন চরমোনাই পীরের অনুসারীরা।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে নতুন করে আলোচনায় আসা চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবার বরিশাল আসায় উৎসুক কর্মীরা তাকে একটু উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। তাতেই নির্বাচন কমিশন সশরীরে ডেকে ব্যাখ্যা চাইল। আওয়ামী লীগ প্রার্থী যে ২০ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-গণসংযোগ করে নৌকায় ভোট চাইছেন সেটা রিটার্নিং কর্মকর্তা দেখেন না? বিধি ভঙ্গ হওয়ার মতো যা যা আছে সবই নৌকার প্রার্থী করছেন। তিনি যা করছেন মনে হয় সেটাই নির্বাচনী আচরণবিধি। এই রিটার্নিং কর্মকর্তা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। তিনি থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসও রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তার প্রত্যাহার দাবি করেন।

সিটি নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে- বিশ্বাস করে না জনগণ। সরকারের সব শেষ পরীক্ষা হিসেবে ৫ সিটি ভোটে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হলে বরিশাল থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

এদিকে গত বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিলেও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে দৈনন্দিন কর্মসূচি কাটছাঁট করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। গতকাল সকালে নগরীর কাশীপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মতবিনিময়ের পূর্বনির্ধারিত সূচি থাকলেও গতকাল সকালে হঠাৎ করে বাতিল করা হয়।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অন্যতম সমন্বয়কারী আফজালুল করিম বলেন, নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হতে পারে এমন কোনো কাজ নৌকার প্রার্থী করছেন না। বাইরের কর্মসূচিকে এড়িয়ে অফিস এবং বাসায় আগন্তুকদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে শুভেচ্ছা আর মতবিনিময় করে নৌকায় সমর্থন চাচ্ছেন সর্বসাধারণের। বিধি ভঙ্গের আশঙ্কায় গতকাল একটি সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা বাতিল করা হয়েছে। নৌকার প্রার্থী বিধির মধ্যে থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম করছেন বলে জানান আফজাল।

এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমার কাছে সব প্রার্থী সমান। নির্বাচন কমিশনের আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করব। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি এবং স্বতন্ত্রসহ মেয়র পদে ৯ জন, ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৬ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৪১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নির্বাচন।

সর্বশেষ খবর