এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা ‘গ্রাউন্ড জিরো’ অবস্থায় আছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু করা দরকার।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক তাওকো কোনিশির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব বাংলাদেশকে ‘টুকরো টুকরো’ প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে নতুন সুযোগ দিয়েছে। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কার শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে এডিবির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক বলেন, এ দেশে কাজ করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তাঁর সংস্থার। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা জোরদার করায় বাংলাদেশে নীতিভিত্তিক ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে সরকারের সদ্য চালু হওয়া আর্থিক খাতের সংস্কার, ট্যাক্স ডেটা ডিজিটালাইজেশন, ডেটার স্বচ্ছতা, জ্বালানি, বেসরকারি খাত এবং বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এডিবি প্রতিনিধি দলকে জানান, তিনি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে গতিশীলতা লক্ষ্য করছেন। রেমিট্যান্স প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও বাড়ছে। মুদ্রাবাজারে আস্থা ফিরে আসছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্বাসযোগ্যতার একটি লক্ষণীয় উত্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে সেখানে। বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি-বিষয়ক প্রধান লামিয়া মোর্শেদ, এডিবির সিনিয়র উপদেষ্টা এডিমগিনটিং, কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং এবং ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং উপস্থিত ছিলেন।
মার্চের মধ্যে ৯০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে এডিবি : বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দেশের ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে এডিবি। গতকাল সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে এ অর্থসহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে এডিবির প্রতিনিধি দল। পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকে এডিবির সিনিয়র অ্যাডভাইজার এডিমগিনটিং, কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং ও ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং উপস্থিত ছিলেন।
২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি : ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ১০০ কোটি ডলার ও এডিবি ১৫০ কোটি ডলার দেবে। গতকাল সংস্থা দুটির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকের পর এ খবর জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারের তিন শর্তে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এখন নীতিসহায়তার জন্য ৭৫ কোটি ডলার দেবে বলেছে বিশ্বব্যাংক। ডিসেম্বরে এ অর্থ পাওয়া যাবে। আর বিনিয়োগ ঋণ ও গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি হিসেবে আরও ২৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে। তবে এ অর্থ পেতে আরও সময় লাগবে। এ ছাড়া এডিবি ১৫০ কোটি ডলার দেবে। প্রথমে দেবে ৫০ কোটি ডলার, পরবর্তীতে ৫০ কোটির দুই কিস্তিতে মিলবে ১০০ কোটি ডলার।