রাজধানীতে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে স্টিলের স্ট্রাকচারে নির্মিত বিশাল পানির ট্যাংকিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মহাখালী, লালমাটিয়া এবং ফকিরাপুল এলাকার পানির ট্যাংকি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এগুলো অনেক আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও অপসারণ করা হয়নি। এখানে ওয়াসার কোনো কার্যালয় নেই। তবে আশপাশে রয়েছে বেশ কিছু দোকানপাট ও মার্কেট। যে কোনো সময় এটিও ভেঙে পড়তে পারে। মহাখালী থেকে গুলশান ১ নম্বর সড়কের পানির ট্যাংকির পাশ দিয়ে চলে গেছে হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন। ফলে যে কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ভব হতে পারে ভয়ংকর পরিস্থিতি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
সরেজমিন দেখা যায়, ওয়াসার তত্ত্বাবধানে থাকা এসব পানির ট্যাংকির অবস্থা খুবই নাজুক। ১৯৬৫ সালে স্থাপন করা এসব পানির ট্যাংকি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্টিলের টেম্পার নষ্ট হয়ে গেছে। গোড়ায় জং ধরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বড় ঝড় কিংবা ভূমিকম্পে যে কোনো দিকে ভূপাতিত হলে অসংখ্য মানুষের জীবননাশের পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইনে পড়ে যে ভয়ংকর বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, সহসা উদ্ধার করাও কঠিন হবে। মহাখালী ওয়াসা জোনের কর্মকর্তারা যেন দেখেও দেখেন না। মহাখালীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী খালিদ আহমেদ জানান, ‘আমিসহ এলাকাবাসী অনেকবার ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।’ জানা যায়, পাকিস্তান আমলে এভাবে ঢাকা শহরে ৩টি পানির ট্যাংকি তৈরি হয়েছিল। তবে কখনো তা ব্যবহার করা যায়নি। আসাদগেটসংলগ্ন লালমাটিয়া পানির ট্যাংকি এবং ফকিরাপুলের পানির ট্যাংকি দুটিও দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ ট্যাংকির কম্পাউন্ডে খুঁটির পলেস্তারা খসে পড়ছে। ওপর থেকে পানি চুঁইয়ে পড়ে। এটা থেকেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ২০১৪ সালে ফকিরাপুল বাজারসংলগ্ন মসজিদের পানির ট্যাংকি ধসে নিহত হন মো. সালাম (৪০) নামের এক লন্ড্রি ব্যবসায়ী। বহু পুরনো ও জরাজীর্ণ পানির ট্যাংকির পাশেই ছিল তার লন্ড্রির দোকান। পরিত্যক্ত ট্যাংকিটি অপসারণে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও তা না করায় ওইদিন বিকালে আকস্মিক ধসে নিহত হন নিরীহ সালাম। ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আহত হন আরও আটজন। শুধু ফকিরাপুলেই নয়, এ ধরনের আরও পানির ট্যাংকি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সবকটিই পরিত্যক্ত। সেগুলো ধসে যে কোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত এসব অনিরাপদ পানির ট্যাংকি নিয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করেছি। এ বিষয়ে আমরা যথযথ ব্যবস্থা নেব। এগুলো অনেক দিন ধরে এভাবেই রয়েছে। আমরা যত শিগগিরই সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আমি তো কেবলই দায়িত্বে এলাম। সরেজমিন রিপোর্ট দেখার পর আমার রিপ্লেস করব। আগে ভেঙে ফেলব তারপর নতুন করে স্থাপন করা হবে। আবার একেবারে ভেঙে ফেললেও বিপদ হবে। ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে আমরা ব্যবস্থা নেব।