দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত চেষ্টার পর এবার শিশুদের জন্ডিসকে প্রতিরোধের একটা পথ হয়তো সত্যি-সত্যিই বেরিয়ে আসতে চলেছে। আর তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে চলেছে এক অনাবাসী ভারতীয় বিজ্ঞানীর নাম। গ্যাসট্রো-এনটেরোলজিস্ট আনন্দ কান্নন।
অনেক সময় জন্মের তিন দিন পর থেকেই জন্ডিসের জটিল জটে জড়িয়ে পড়তে হয় কথা বলতে না পারা শিশুদের। সেই কষ্টের কথা তারা বলতে পারে না। শুধু কাঁদে। আর কাঁদায় মা, বাবাকে। কষ্টে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে বিছানায় অয়েল ক্লথের মধ্যে শুয়ে থাকা শিশুটির গালে, চিবুকে। তার গা'টা হয়ে যায় একেবারে কাঁচা সোনার মতো হলদেটে। সেই হলুদ উঠে আসে তার ছোট্ট বেবি ফ্রকে, বালিশে। তার পাশ ঘিরে থাকা কাপড়চোপড়ে। জন্মের পর কোন শিশুর পক্ষেই জন্ডিসের সেই হাঁসফাঁস থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
মাতৃগর্ভের আগলে রাখা বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে হয়তো জন্মের ওই তিন দিন পর থেকেই শিশু ধীরে ধীরে টের পেতে শুরু করে কাকে বলে জীবন যন্ত্রণা! এই রোগটির নাম- ‘সিভিয়ার নিওন্যাটাল হাইপারবিলিরুবিনেমিয়া’। কেন প্রতিটি শিশুকেই জন্মের তিন দিন পর থেকে আক্রান্ত হতে হয় জন্ডিসে, তার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এত দিন। আরও সঠিক ভাবে বলতে গেলে, শিশুদের ওই জন্ডিসের জন্য তার শরীরে পিছন থেকে ‘কলকাঠি’ নাড়ে কে, কী ভাবে, বহু বহু শতাব্দীর তন্নতন্ন তল্লাশেও তা জানা যায়নি। একেবারে হালে যা খুঁজে পেয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সান দিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিন’-এর ফার্মাকোলজির অধ্যাপক রবার্ট টুকে আর তার সহকর্মী, ফার্মাকোলজির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর শুজুয়ান শেন। সঙ্গে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয়, কেরলের সন্তান গ্যাসট্রো-এনটেরোলজিস্ট আনন্দ কান্নন। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘ইনটেসটাইন্যাল এনসিওআর-ওয়ান, আ রেগুলেটর অফ এপিথেলিয়াল সেল ম্যাচুরেশন, কন্ট্রোলস নিওন্যাটাল হাইপারবিলিরুবিনেমিয়া’। এর ফলে, শিশুদের জন্ডিস প্রতিরোধের ওষুধ আবিষ্কারের পথটা খুলে গেল বলে মনে করছেন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। সূত্র: আনন্দবাজার।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার