পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দেশের অর্থ বিদেশে পাচারকারী নেতা ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। মুজিববাদী রাজনীতি এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। যাতে এদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। কারণ মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদ একই সূত্রে গাঁথা।
রবিবার কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ হাই স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামী ইলিয়টগঞ্জ শাখা কর্তৃক আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় এক দোয়া সমাবেশে এসব কথা বলেন মাসুদ সাঈদী।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, দেশপ্রেমিক রাজনীতিকরা যখন রাষ্ট্র গঠনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন, তখন দিল্লি বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এখন তিনি চট করে দেশে ঢুকে পড়ার ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা বলি আপনি আসুন। সৎ সাহস থাকলে দেশে আসুন। দেশের মানুষ আপনার আগমনের অপেক্ষায়। আপনি দেশে আসলেই সকল গুম-খুনের বিচার, জুলুম নির্যাতনের বিচার, কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীসহ নিরপরাধ জামায়াত নেতৃবৃন্দের হত্যার বিচার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হবে। আমরা বর্তমান সরকারকে বলতে চাই, এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিচার করতেই হবে। এমন বিচার করতে হবে, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। যাতে এদেশে নতুন করে আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
আওয়ামী শাসনামলে রচিত পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দাবি জানিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, এক ব্যক্তির বন্দনায় রচিত মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছাত্রসহ জাতিকে জানাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যার যতটুকু অবদান ছিল তা লিপিবদ্ধ করে নতুন করে পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে হবে। সকল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক থেকে মুজিব বন্দনা বাদ দিতে হবে। সকল শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকে চব্বিশের শহীদদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যেন বলতে পারে যে, আমরা একাত্তর ও চব্বিশের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সুন্দর এই সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি। একই সাথে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে আজীবন লড়াই করা বীর যোদ্ধা আল্লামা সাঈদীসহ ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে ট্রাইব্যুনালে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা বিশ্ববিখ্যাত জামায়াতের সকল শীর্ষনেতা এবং চব্বিশের সকল শহীদদেরকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। চব্বিশের শহীদের প্রত্যেকের পরিবার থেকে অন্তত একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে। আহত সকলকে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাসহ এককালীন অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে হবে।
সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টাদের নিকট প্রশ্ন রেখে মাসুদ সাঈদী বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা এখনো রাজপথে রয়েছে। এখনো তারা আন্দোলন সংগ্রাম করছে। আর আপনরা চব্বিশের চেতনা ভুলে গিয়ে বঙ্গভবনে বসে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলে দিবেন, দিন। কিন্তু আপনারা কাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছেন? যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন, তাদের কেউ কেউ ধানমন্ডি-৩২ নম্বরকে কাফেলা মনে করে। কাদের কথায় ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসে আপনারা ফ্যাসিবাদী পুনর্বাসন করছেন? দেশের মানুষের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে তামাশা না করে দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করুন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এরপর জনগণের পছন্দমাফিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আপনারা স্বসম্মানে আপনাদের স্ব স্ব জায়গায় ফিরে যান।
শেখ মুজিবের সমালোচনা করে সমাবেশে মাসুদ সাঈদী বলেন, আওয়ামী লীগের ডিএনএ’তেই ফ্যাসিজম আছে। খুনি হাসিনা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়েছে, পিলখানায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা সাঈদীর রায় পরবর্তী বিক্ষোভে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড করেছে, জুলাই বিপ্লবেও নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। শুধু হাসিনার ইতিহাসই হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী ’৭২ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ মুজিবও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করার চেষ্টা চালিয়েছিল। চারটি পত্রিকা বাদে দেশের সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিলো শেখ মুজিব। ইতিহাসের পটপরিক্রমায় আজ আওয়ামী লীগের রাজনীতিই বাংলার মাটিতে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই উলেখ করে সাঈদীপুত্র বলেন, দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সকল দল এবং মতকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মতো দেশ গঠনেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য দরকার। বিশেষ করে সকল ইসলামী দলের ঐক্য এখন সময়ের একক দাবি। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর ঐক্য ছাড়া বিপ্লবের সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হবে।
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কুরআন ও সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাম ছাড়া বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। সোনার বাংলার জন্য আগে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। সোনার মানুষ তৈরি করতে জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে। নৈতিকতা, আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরি করার সেরা সংগঠন জামায়াতে ইসলামী।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য আন্দোলন করে না, জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন করে ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। একটি কুচক্রী মহল প্রচার করে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশ পিছিয়ে যাবে, জঙ্গিবাদে দেশ ধ্বংস হবে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশ এগিয়ে যাবে। দেশ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, জঙ্গিবাদ ও ভারতীয় আগ্রাসনমুক্ত হবে।
ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন আমীর মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে ও ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মো. শিমুল হাজারীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদে সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আমির কাজী দ্বীন মোহম্মদ, কুমিল্লা জেলা উত্তর আমির অধ্যাপক আব্দুল মতিন, কুমিল্লা জেলা উত্তর সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ, দাউদকান্দি উপজেলা আমীর মনিরুজ্জামান বাহলুল, কুমিল্লা জেলা উত্তরের মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা খন্দকার আবুল বাশার, চান্দিনা উপজেলা আমীর মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, মুরাদনগর উপজেলা আমির আ ন ম ইলিয়াস উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবির কুমিল্লা জেলা পশ্চিমের সভাপতি জিসান আহমেদ প্রধান।
হাফেজ মো. তরিকুল ইসলামের কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইঞ্জি. শওকত আকবর, মাওলানা মহিউদ্দিন সোহেল, মাওলানা আবু ছালেহ গাজী, মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা গোলাম মাওলা ফারুকী প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত