পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেছেন, ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর লগি-বৈঠা তাণ্ডবের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে পথহারা হয়েছিল, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আবার পথ ফিরে পেয়েছে। সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে। এখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা বাদে অন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। একটি বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও ২৪ সালের বীর যোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
শুক্রবার জামায়াতে ইসলামী ৪নং দীর্ঘা ইউনিয়নের উদ্দ্যোগে দক্ষিণ লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী।
ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস হত্যার ইতিহাস উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। অন্তত এক হাজার মানুষকে গুম করেছিল। আয়নাঘরে বন্দি করে রেখেছিল দেশপ্রেমিকদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মূল কারণ গুম ও খুন। গুম ও খুনের মাধ্যমে দেশজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেলেও পেছনে রেখে গেছে এক রক্তাক্ত গণবিপ্লবের নির্মম হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস। এই বিপ্লবে গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগের। নির্দয়ভাবে গুলি করে বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। এই গণহত্যার দায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
জামায়াতে ইসলামী ৪নং দীর্ঘা ইউনিয়নের সভাপতি মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান সভাপতিত্বে ও সহ-সেক্রেটারি ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় গণ সমাবেশে মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ ও জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর যে নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল শত শত রাতেও বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না বলে মন্তব্য করে মাসুদ সাঈদী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীসহ দেশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। ’৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা যেভাবে সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সেরকমভাবে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি হতেই হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিগত পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা এমন কোনো কাজ বাকী নাই, যেটা করেনি। রাষ্ট্র থেকে একটি দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় নেতাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছে।
মাসুদ সাঈদী বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেখানে থাকবে না শোসন বঞ্চনা ও প্রতিহিংসা। জামায়াত চায়, সংবিধানের আলোকে সকল ধর্মের বর্ণের মানুষকে সমান অধিকার প্রদান করতে। জামায়াতে ইসলামী কুরআন ও সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াত চায়, এদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে। সোনার বাংলার জন্য আগে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। তাই সোনার মানুষ তৈরি করতে দেশব্যাপি জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। তাই দেশবাসী বিশ্বাস করে নৈতিকতা, আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরি করার সেরা সংগঠন জামায়াতে ইসলামী।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত চায়, সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত করতে। আমরা বিশ্বাস করি, নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি প্রজন্মই দেশের উন্নয়ন এবং জাতির ভবিষ্যৎকে আলোকিত করবে।
৪নং দীর্ঘা ইউনিয়ন জামায়াত কর্তৃক আয়োজিত গণ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব, জিয়ানগর উপজেলার সাবেক আমীর ও জেলা মজলিসে শুরা সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, নাজিরপুর উপজেলা শাখার আমির মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সেক্রেটারি কাজী মোসলেহ উদ্দিন, নাজিরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবু সাঈদ মোল্লা, জাতীয় ইমাম সমিতির নাজিরপুর উপজেলা সভাপতি মাওলানা রুহুল্লাহ বেলালী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাজিরপুর উপজেলা সভাপতি শেখ আবু হানিফ, আল্লামা সাঈদীর স্বাক্ষী সুখরঞ্জন বালী, ঘোষকাঠি মনোরঞ্জন বিদ্যানিকেতন এর প্রধান শিক্ষক বাবু শেখর রায়সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত