জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ, এর মধ্যেই মধুর খোঁজে হাজার হাজার মৌয়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে। আজ শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে শুরু হয়েছে মধু আহরণ মৌসুম। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। ইতোমধ্যে প্রায় একহাজার মৌয়াল নির্দিষ্ট পরিমান রাজস্ব দিয়ে মধু আহরণ করতে বিশ্বের অন্যতম এ ম্যানগ্রোভ বনে পৌঁছেছেন। সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সুন্দরবনের মধুর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। প্রতি বছর এ বন থেকে গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার মন মধু আহরিত হয়, যা সারা দেশ থেকে আহরিত মধুর অর্ধেকেও বেশী।
ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার কাছে সমান সমাদৃত সুন্দরবনের মধু। শত শত বছর আগে জমিদার, রাজা-বাদশাদের কাছেও জনপ্রিয় ছিল সুন্দরবনের মধু। নানা রোগ-বালাই নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এ মধু। সুন্দরবনের বিভিন্ন ফুলের মধুর মধ্যে খলসী ফুলের মধু হচ্ছে সর্বাধিক স্বচ্ছ ও সুস্বাদু। বিক্রি হয় অধিক দামে। সে কারনে সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের মধ্যে সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের অরণ্যে খলসী গাছের আধিক্য থাকায় মুধু আহরণকারী মৌয়ালদের লক্ষ্য থাকে ওই দুটি রেঞ্জ। এই দুটি রেঞ্জ থেকে সুন্দরবনের মধুর ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আহরিত হয়ে থাকে।
সুন্দরবনের মৌয়ালরা হতদরিদ্র ও অশিক্ষিত হলেও সনাতন পদ্বতিতে পেশাগত কারনে তারা মধু আহরণ করে থাকে নিপুন হাতে। মৌয়ালরা ছোট-বড় দেশীয় নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে দলবদ্ধভাবে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে যায়।
সুন্দরবনের মধু আহরণ করা একাধিক মৌয়ালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা একটি গ্রুপে সাতজন করে থাকেন। একজন রান্নাসহ নৌকা পাহারা দেন, অন্যরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে মৌচাক খুঁজতে মধু আহরণের নানা সরঞ্জাম নিয়ে মৌমাছির পিছনে ছুঁটে চলে। অনেকে আবার বাইনোকুলারের সাহায্য নেয়। এভাবে তারা মৌচাক খুঁজে পেলে 'কু' শব্দ করে সংকেত দেয়। তখন দলের অন্যরা সেখানে পৌঁছায়।
এরপর তারা মাথায় গামছা বা কাপড় বেঁধে খড়-কুটার 'উকো বা তড়পা' দিয়ে আগুনের ধোয়া সৃষ্টি করলে মৌচাক থেকে মৌমাছিরা পালিয়ে যায়। এরপর চাক থেকে মধু ও মোম আহরণ করা হয়। মৌয়ালরা সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণকালে প্রতি বছর অনেক মধু মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিবছর মধু আহরণকালে বেশ কিছু মৌয়াল সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হামলায় নিহত হয়। এছাড়া সাপের কামড়ে, কখনো আবার কুমিরের হামলায় প্রাণ হারায় অনেকে।
বিডি-প্রতিদিন/০১ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ