একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
এর আগে, কারা কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠালে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, তাদের শিশু সন্তান ও স্বজনসহ ৪৫ জন কেন্দ্রীয় কাশিমপুর কারাগারে উপস্থিত হন।
মীর কাসেমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মোট ৩৮ জনকে দেখা করার জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় বলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ জানান। সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে তারা বেরিয়ে আসেন। কারা ফটক থেকে বের হয়েই গাড়িতে উঠে চলে যান তারা।
এদিকে, সন্ধ্যার পরপরই কারাগারে প্রবেশ করেন আইজি প্রিজন, এসপি ও সিভিল সার্জন। এসব থেকে আগেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, শনিবার রাতেই মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
এর আগে শুক্রবার মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে জানান। তারপর থেকে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে আর কোনো আইনি বাধা ছিল না। তাই কাশিমপুরের ফাঁসির মঞ্চ ওইদিনই প্রস্তুত রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ঘিরে গড়ে তোলা হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। পুলিশের সাঁজোয়া যান শুক্রবার রাতেই অবস্থান নেয় কারাগারের সামনে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকে।
এর আগে কারাগারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। মীর কাসেম আলীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এ কারাগারে কোনো যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হলো।
৩০ আগস্ট মীর কাসেমের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রিভিউ আবেদন খারিজের তিন দিনের মাথায় মীর কাসেম জানান, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।
মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুটি অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্য ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে তার কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। তার আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়। মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের ওপর গত ২৮ আগস্ট শুনানি শেষ হয়। এরপর ৩০ আগস্ট মীর কাসেমের করা আবেদন খারিজ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ে রিভিউ আবেদনই ছিল শেষ ধাপ। এই আবেদন খারিজ হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার পথ শুধু খোলা ছিল।
তবে শুরুতে মীর কাসেম জানিয়েছিলেন, ‘নিখোঁজ’ ছেলের সিদ্ধান্ত ছাড়া তিনি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেবেন না। মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন দাবি করেছিলেন, সাদা পোশাকধারী লোকজন তাদের ছেলে ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাসেমকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। সেই ছেলে তার বাবার আইনজীবীও। পারিবারিক যে কোনো পরামর্শের জন্য তাকে প্রয়োজন। ছেলেকে ছাড়া তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না তার স্বামী। পরিবারও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।
বিডি প্রতিদিন/ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম