রাজধানীর চকবাজারে গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঘটে গেল ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী এখন আলোচিত বিষয়। এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৬৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দগ্ধ ও আহত হয়ে আরও কমপক্ষে ৪১ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এই অগ্নিকাণ্ডের পর আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক বাড়িতে অবৈধ কেমিক্যাল কারখানার বিষয়টি।
২০১০ সালে পার্শ্ববর্তী নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনার পর ওই এলাকায় কেমিক্যাল কারখানার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
এর দীর্ঘ কয়েক বছর পর ব্যবসায়ীদের চাপে সম্প্রতি আবারও শর্তসাপেক্ষে ওই এলাকার কেমিক্যাল কারাখানার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন শুরু করে ডিএসসিসি।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন, ৫টি পারফিউম কারখানার ট্রেড লাইসেন্স নবায়নও করা হয়।
আর নবায়নের মাত্র একদিন পরই ঘটলো ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা, যাতে ব্যাপক এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো।
চকবাজারের ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির পর মেয়র বলছেন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরাতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ব্যাপারে তিনি জোর পদক্ষেপ নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
কিন্তু ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেন মেয়র।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নগর ভবনে ব্যবসায়ীদের সাথে কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও কেমিক্যাল পল্লীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর’ শীর্ষক সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। তিনি মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যতদিন পর্যন্ত পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা কেমিক্যাল পল্লীতে স্থানান্তর না হয়, ততদিন ব্যবসা করার সুযোগ দিন। তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সুযোগ দিন। ব্যবসায়ীরা যেন পুলিশি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকটা খেয়াল করতে তিনি মেয়রের প্রতি অনুরোধ করেন। সভায় অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর আমরা ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছি না। এ ব্যবসায় আমাদের রুটি রুজি, এটা বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল ছাড়া অন্যগুলোর ব্যবসা করার সুযোগ দিন। তা নাহলে আমাদের পুরান ঢাকার ব্যবসা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে মেয়র অনেকটা নমনীয় হন। এতদিনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শর্ত সাপেক্ষে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। মেয়র বলেন, আমরা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাই না। তবে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আমাদের। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, ওই এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালানো হবে। তখন যে সব কেমিক্যাল কারাখানা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয় বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, সেসব কারখানাকে ‘অন দ্য স্পটে’ ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কেমিক্যাল কারখানা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম