বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন প্রণব মুখার্জি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অকৃত্রিম অবদান মুক্তিকামী বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
মঙ্গলবার রাতে বিবার্তা২৪ ডটনেট আয়োজিত ভার্চুয়াল এক স্মরণসভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রণব মুখার্জি প্রতিবেশীর প্রতি চরম সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ববান একজন রাজনৈতিক বোদ্ধাও বটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রণব মুখার্জিকে একজন অকৃত্রিম বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অভিভাবক হিসেবেই আমরা পেয়েছি। তিনি দায়িত্বপূর্ণ অভিভাবকের ন্যায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের স্নেহ-মমতা ও দায়িত্বশীলতার চাদরে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা অনেকেই বলি এটা শুধু আত্মার সম্পর্ক নয়, এটা রক্তের সম্পর্ক। আর এই রক্তের সম্পর্ক বন্ধনের পিছনে কয়েকজন ব্যক্তির অবদান ছিল। তার মধ্যে অন্যমত ছিলেন প্রণব মুখার্জি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার আমাদের এক কোটি ২০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। তখনো তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারতের বাজেট অধিবেশন চলাকালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য দাবি তুলেছিলেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা দেয়ার জন্য তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
হানিফ বলেন, প্রণব বাবু তার রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত সাদামাটা ব্যক্তি ছিলেন। বিশেষ করে উনি অত্যন্ত দায়িত্ববানও ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেও তার গভীর সম্পর্ক ছিল।
তিনি বলেন, তিনি আমাদের যে কোনো দুর্যোগেই বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বিপদের সময় পাশে থেকে সহায়তা করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন আমি উনার সাথে ছিলাম। তখন দেখেছি তিনি কতটুকু শিল্পমনা মানুষ। এই বিশাল হৃদয়ের অধিকারী মানুষকে হারিয়ে এই উপমহাদেশের সকল দেশের মানুষের একজন অভিভাবককে হারিয়েছেন। যা পূরণ করা সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন কর্মবীর। তিনি যেসব জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন তা অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে করেছিলেন। তার জীবনে কোন ইস্যু নিয়ে কখনো কোন রকমের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
প্রণব মুখার্জির যোগ্যতার প্রসংশা করে তিনি বলেন, তিনি শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতাও করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি একই সাথে লেখক, পাঠক, রাজনীতিবীদসহ নানা গুনের অধিকারী ছিলেন। তিনি যেসব বই লিখেছেন সব কয়টি বই ইংরেজিতে লিখেছেন। তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ও মুজিবনগর সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার যে দাবি উত্থাপন করেছিলেন; সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য।
শোক প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, তিনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। হাজারো ব্যস্ততার পরও যখনই দেখা হয়েছে; তখনই সাদরে গ্রহণ করেছেন আমাদের। সব সময়ই বাঙালি জাতির প্রতি তার অন্য রকম ভালোবাসা আর দরদ ছিল। এটা অস্বীকার করা যাবে না।
উল্লেখ্য, গত সোমবার নয়া দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত