৩ আগস্ট, ২০১৯ ১৪:৪৯

এডিস মশা, সাথে ডেঙ্গু ভাইরাস!

ডা. মো. হারুন উর রশিদ

এডিস মশা, সাথে ডেঙ্গু ভাইরাস!

ডা. মো. হারুন উর রশিদ

আমাদের পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪.৫ বিলিয়ন বছর। মশার আগমন প্রায় ২২০ মিলিয়ন বছর আগে, আর মানুষের মাত্র ২ লক্ষ বছর। দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর উপর মানুষের চেয়ে মশার অধিকার বেশি! আর সাম্প্রতিক সময়ে মশার কাছে মানুষের শোচনীয় পরাজয় আমাদেরকে অনেক আতঙ্কিত করে তুলেছে। কিন্তু মানুষকে বুদ্ধিমান প্রাণী বলে মনে করা হয়! তারা জানে মশার সাথে ক্যাচাল এ গিয়ে পারা যাবে না! কারণ প্রকৃতি তাদেরকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। এর থেকে বরং মশাকে কিভাবে দূরে রাখা যায় সেটাই মানুষের প্রধান কৌশল। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেকগুন বেশি ভাল, কারণ প্রতিকার নাই।

এডিস মশাকে গৃহপালিত সৌখিন পোকা বলা যেতে পারে। কারণ তারা জঙ্গল পছন্দ করে না। তারা আমার বাসায়, আপনার বাসায় আর তার চারপাশের উষ্ণ পরিবেশে থাকতে ভালোবাসে। আমাদের আপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ নোংরা করার ও রাখার সহজাত প্রবৃত্তি তাদের এই বীরদর্পে উত্থানের প্রধান কারণ। 

এডিস মশা ছোট, কালো বর্নের হয়। তাদের সাদাকালো ডোরাকাটা পা দেখে চেনা খুব সহজ। তারা আমাদের বাসার এবং তার চারপাশে বেড়ে ওঠা গাছপালা, লতা-পাতা ফুল থেকে প্রাপ্ত মধু বা চিনি খেয়ে সুখে বাস করে। স্ত্রী মশা বাঁচে ৬০ দিন, আর পুরুষ মাত্র ১০। প্রকৃতি প্রায় সব দিক থেকেই মেয়েদেরকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। প্রকৃতির উদ্দাম খেলায় মেয়ে মশার গর্ভে ডিম বেড়ে ওঠে। কিন্তু ডিমের পরিপক্কতার জন্য প্রয়োজন লোহা! আর লোহা পাওয়া যায় রক্তে! তাই ডিম পাড়ার আগে শুধুমাত্র স্ত্রী মশাকে কয়েক দফায় মানুষকে কামড়াতে দেখা যায়। রক্ত পাবার পর ডিম পরিপক্ব হবার পর এবার ডিম পাড়ার পালা। সব জায়গা ডিম পাড়ার জন্য পছন্দের না। পানি স্থিরভাবে ধরে রাখতে সক্ষম এমন পাত্র বা স্থানের ভিতরের দিকের শুকনো জায়গায় তারা ডিম পাড়ে। এই ডিম সেখানে মাসের পর মাস টিকে থাকতে পারে! ডিম পানির সংস্পর্শ এ আসার সাথে সাথে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। লার্ভাগুলো পানিতে আনন্দে সাতার কাটে আর পোকা খায়। এভাবে প্রায় ১০ দিনের মধ্যে তারা বড় হয়ে বাতাসে ওড়ার উপযোগী হয় এবং চিরদিনের জন্য পানি থেকে বিদায় নেয়।

ডেঙ্গু ভাইরাস কোথা থেকে মানুষ আর মশার এই সুন্দর প্রাকৃতিক সম্পর্কের মাঝে চলে আসল তা আমরা জানি না। মশা হয়ে উঠলো ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক আর মানুষের শত্রু। ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সরাসরি ছড়াতে পারে না, প্রয়োজন হয় এডিস মশার। মানুষ-মশা-মানুষ এই চক্রাকারে ডেঙ্গু ভাইরাস ঘুরতে থাকে।

ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের রক্তে প্রবেশের প্রায় চার দিনের মাথায় সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। একে ভাইরেমিয়া বলে। ঠিক পঞ্চম দিনে প্রথম জ্বর অনুভূত হয়, আর প্রায় ১২ দিনের মধ্যে জ্বরসহ ভাইরেমিয়া ভাল হয়ে যায়। ঠিক এই বারো দিনের মধ্যে যদি কোন এডিস মশা রক্ত পান করার জন্য কামড় দেয় তাহলে রক্তের সাথে সাথে ভাইরাসও মশার মধ্যে ঢুকে পড়ে আর প্রায় সাত দিনের মধ্যে মশার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্ত্রী মশা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসকে বহন করবে, আর যাকেই কামড়াবে সে ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হবে। ভাইরাস মশার লালার মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। মজার বিষয় হচ্ছে, রক্ত পান করবার সময় মশা মানুষের রক্তে লালা ঢুকিয়ে দেয় যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে! 

দুর্ভাগা কিছু মানুষের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী এই ভাইরাসের সাথে পেরে ওঠে না। রক্ত থেকে পানি আলাদা হয়ে শরীরের সব অংগপ্রত্যঙ্গ ভাসিয়ে দেয়! মাল্টি অরগ্যান ফেইল করে। মানুষ হারিয়ে যায়। বাঁচার উপায়? প্রতিরোধ। প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধ। 

লেখক: ইন্টেনসিভ কেয়ার রেসিডেন্ট
বিএসএমএমইউ, ঢাকা

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর