৪ মার্চ, ২০২১ ১২:৫৭

করোনা মহামারীতে বাংলাদেশে আর্থিক শোষণ চালাতে চাইছে চীন

অনলাইন ডেস্ক

করোনা মহামারীতে বাংলাদেশে আর্থিক শোষণ চালাতে চাইছে চীন

এটা ঠিক, করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ চীন থেকে প্রচুর চিকিৎসা সরঞ্জাম পেয়েছে। মাস্ক, পিপিই, করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীও দিয়েছে তারা। মহামারীর সময় রেডক্রস সোসাইটি অব চায়না, কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা মানবিক কারণেই বাংলাদেশের প্রতি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন কড়ায়-গণ্ডায় সেই টাকা উদ্ধারের অনৈতিক খেলায় মত্ত বেইজিং।

বেসরকারি সংস্থা সিনোভ্যাক বায়োটেক-এর করোনা টিকা ট্রায়ালের নামে বাংলাদেশের কাছে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা চাওয়াটা বিস্ময়কর। প্রথমে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়েছে বেইজিং। তখন কোনও টাকা চাইলো না। কিন্তু তারপরই বেসরকারি সংস্থাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে চীনের চিঠি বেশ রহস্যজনক। এমনিতেই বেসরকারি কোনও সংস্থাকে আর্থিক সাহায্য করা সরকারের পক্ষে বেশ কঠিন। 

তাছাড়া করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে তো বাংলাদেশ নিজেই টিকা তৈরি করতে পারতো। অন্য দেশের প্রাইভেট কোম্পানিকে আর্থিক সাহায্য করার কোনও যুক্তিই থাকতে পারে না। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠায় চীন। 

চিঠির জবাবে ১৩ অক্টোবর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, তারা কোনও বিদেশি বেসরকারি সংস্থাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারেন না। এছাড়াও চীনের সঙ্গে চুক্তিতে কোথাও লেখা নেই করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে আর্থিক সহায়তার কথা। বরং চুক্তি অনুযায়ী চীন ১ লাখ ১০ হাজার টিকা বিনা পয়সায় বাংলাদেশেকে দিতে অঙ্গিকারবদ্ধ। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা করারও কথা ছিল তাদের। চীন কথার খেলাপ করেছে। তাই ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। 

ভারত ২০ লাখ টিকা বিনা পয়সায় দিয়েছে। তাছাড়াও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে ৩ কোটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। ভারত প্রয়োজনে আমাদের প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত সাহায্য করতেও সম্মত হয়েছে। শুধু টিকা নিয়েই নয়, মহামারীর সময় চীন সরকারের উদাসীনতার জন্য বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। 

কোভিডের অজুহাতে ২০১৯-এর শেষ দিক থেকেই বাংলাদেশে কমছে চীনা অর্থায়ন। চীনা শ্রমিক ও চীনা নির্মাণ সামগ্রীর অভাবের পাশাপাশি ঋণ প্রদানেও চীন সংস্থার ঢিলেমিতে বিভিন্ন প্রকল্পের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার অর্থ মঞ্জুর হয়েছে। ফলে বহু কাজ থমকে রয়েছে। বেইজিং-এর অর্থায়নে ঢিলেমির ফলে থমকে গেছে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়ন। 

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবসা হয় তাদের সঙ্গে। কিন্তু দীর্ঘদিনের তারিফ বিভ্রাটে এই বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক বানিজ্যে বাংলাদেশের লাভের ঘর প্রায় শূণ্য। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি বানিজ্যকে উৎসাহিত করতে চায় না চীন। ফলে ঝুলে রয়েছে তারিফ সংক্রান্ত বহু সমস্যা। গার্মেন্টই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি। অথচ চীনে পোশাক রপ্তানিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হলেও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সেটা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩৩০ মিলিয়ন ডলারে। তাও আবার ২৯৯টি সামগ্রীর ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এই চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজনই বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের সমস্যায় ফেলেছে। অনেকে প্রতারিতও হয়েছেন। বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প আজ তাই খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। এরজন্য দায়ী চীনের স্বার্থপর অর্থনীতি। 

বাংলাদেশে ৩৬ লক্ষ মানুষ কাজ করেন গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে। পোশাকই তো দেশের সবচাইতে প্রাণবন্ত শিল্প। অথচ সেই প্রাণবন্ত শিল্পই আজ কমিউনিস্ট চীনের কারণে ধুঁকতে বসেছে। চীন যদি বাংলাদেশের প্রত্যাশা মতো পোশাক আমদানি না করে তবে বহু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাজ হারাতে পারেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ঝুঁকি দেখা দিতে পারে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির মজুরিতেও। বেকারত্বের চাপ বাড়তে পারে সরকারের ওপর। এরই হাত ধরে যে সঠিক পরিকল্পনা ও সুচিন্তিত পথে দেশ এগিয়ে চলেছে, তিা বিঘ্নিত হতে পারে সেই অগ্রগমনেও।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তারই সুযোগ্যা কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অগ্রগমন প্রতিবেশীদের অনেকেরই ঈর্ষার কারণ। তাই তারা চায় না বাংলাদেশের এই অগ্রগতি। গার্মেন্ট শিল্পকে আঘাত করলে অনেকটাই দুর্বল হবে উন্নয়নের গতি। তাই আন্তর্জাতিকস্তরেও চক্রান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিকশিত হোক অনেকেই চায় না। চীনের ভূমিকাও কিন্তু সন্দেহজনক। মনে রাখতে হবে, মহান মুক্তিযুদ্ধে চীন কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষেই ছিলো। আজ বন্ধু সাজতে চাইলেও বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে বাংলাদেশের স্বীকৃতিটুকুও বেইজিং দেয়নি। 

অনেকেই মনে করেন, ব্রিটিশ বণিক সংস্থা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধুনিক সংস্করণ কমিউনিস্ট শাসিত চীন। অন্য দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করাই এখন তাদের ধর্ম। বণিক সেজে ঢুকে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের সেই সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক ধারাকে নতুন রূপে নিয়ে এসেছে চীন। আর্থিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রে সহজেই আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে তারা। পাকিস্তান-সহ বহু দেশই তার প্রকৃত উদাহরণ। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি। এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে ইহুদি মহাজনদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাইছে শি জিনপিং-এর চীন। আঘাতটাও তাই আসছে দেশের অর্থনীতির ওপর।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর