১২ মার্চ, ২০২৩ ০১:৪৭

নৃশংসতায় দুই কবি-শিক্ষক

জাফর ওয়াজেদ

নৃশংসতায় দুই কবি-শিক্ষক

জাফর ওয়াজেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দুই শিক্ষক ছিলেন (প্রয়াত) যারা একাধারে কবি ও গবেষক। দু’জনেরই মূল নাম হুমায়ূন কবির। সমসাময়িক দু’জনের একজন তাই নামের শেষাংশ থেকে ‌‘কবির’ বিয়োজন করে সংযোজন করেন ‌‌‌‘আজাদ’। কী মর্মান্তিক! দু'জনই নিহত হয়েছেন আততায়ীদের হাতে একজন গোপন সশস্ত্র দলের প্রতিপক্ষের হাতে, অপরজন একাত্তরের নরঘাতকদের উত্তরসূরিদের হাতে। একজন আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন।

কবি হুমায়ূন কবির মৃত্যুর সময় ছিলেন তরুণ প্রভাষক। ১৯৭০ সালে তিনি কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার ওপর কাজ করছিলেন। প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারোয়ার তখন ইত্তেফাক গ্রুপের সাপ্তাহিক ‌‘পূর্বাণী’র নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ধারাবাহিকভাবে এই লেখা ছেপেছিলেন। সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পাটির তাত্ত্বিক হুমায়ূন কবিরের রাজনৈতিক সহকর্মী ফরহাদ মজহার। একাত্তরে হুমায়ূন কবির বরিশালের পেয়ারা বাগানে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেন। যদিও সর্বহারা পার্টির একাংশের অবস্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে। ১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীনের পর সংগঠনের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাধে। নিজ দলের গ্রুপের হাতেই তিনি খুন হন। ইন্দিরা রোডের ভাড়া বাড়ির সামনে ধবধবে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা কবি হুমায়ূন কবির এক সকালে লাশ হয়ে যান। গুলি করে ঘাতকরা বীরদর্পে হেঁটে গিয়েছিল সেই ১৯৭২ সালে।

হুমায়ূন কবির খুন হবার আগেই তাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তার ভূমিকা তারা মেনে নেবেন না। মৃত্যুর পর তার একমাত্র কাব্য ‌‘কুসুমিত ইস্পাত’ গ্রন্থটি প্রকাশ হয়েছিল। যাতে লিখেছিলেন ‘বাগানে যাই, বাগানে বড় সুখ, সেখানে পাতা বুকের মত বড়।’ কবি হুমায়ুন কবির খুন হবার পর ফরহাদ মজহার কবিতায় হুমায়ূনকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‍‘আমি তোকে ডেকে বলতে পারতুম হুমায়ূন অতো দ্রুত নয়, আরো আস্তে যা।’ হুমায়ূন কবির হত্যার পর মামলা হলেও বিচার এগোয়নি।

কবি হুমায়ূন আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক ছিলেন। কোনো দলীয় রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চেতনাধারী। প্রয়াত দুই কবি-শিক্ষককে মনে পড়ছে।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর