অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদা। এর মধ্যে বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে, মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা অনুচ্ছেদে-এই চাহিদার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল সূচক হিসেবে ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট বা অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বিবেচনা করা হয়। আবাসন শিল্প এই অবকাঠামোগত শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সোমবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, পিএএ তাঁর কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন।
প্রশাসনে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত, রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আবাসন খাত গত ৫০ বছরে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে, একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দ্রুত নগরায়ণ ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ আবাসন খাতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে তুলছে। আবাসন আমাদের দেশে দুই ভাবে গড়ে উঠছে; প্রথমত শহুরে আবাসন আর অন্যটি গ্রামীণ আবাসন। গ্রামীণ আবাসনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ- সরকার আশ্রয়ণের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের চমৎকার ঘর করে দিচ্ছে। সাধারণত গ্রামের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষদের ইট-কংক্রিট দিয়ে ঘর করার সামর্থ্য থাকে না। ইতোমধ্যে নিম্ন আয় ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আড়াই লাখ ঘর করে দিয়েছে। প্রতি একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন হলে ১০ লাখ মানুষ গ্রামীণ আবাসনের আওতায় এসেছে। এটা এক ধরনের আবাসন যা কল্যাণ রাষ্ট্রে থাকে, যা আমাদের সংবিধানেও রয়েছে। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ভূমিহীন ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনতে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ ধরনের আবাসনের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এই কার্যক্রমকে বেগবান করছে। অন্যদিকে শহুরে আবাসন গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পুরস্কার ‘জনপ্রশাসন পদক’ প্রাপ্ত ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, পারিবারিক কাঠামোতেও আমাদের দেশ বিগত কয়েক দশকের তুলনায় একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৃহৎ ও যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট ছোট একক পরিবারের সংখ্যা বেড়ে চলছে। জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত মানুষ রাজধানীগামী হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশে বাড়ছে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা। আর এমন মানুষ প্রতিনিয়ত খোঁজ করছে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই। ফলে ফ্ল্যাট এবং অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।তিনি বলেন, যারা রাজধানীতে চাকরি করে বা ব্যবসা করে তারা প্রত্যেকেই নিজের স্থায়ী ঠিকানা চায়। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে, আমাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। অনেকেই অন্যের বাসায় ভাড়াটে হয়ে থাকতে চায় না। সবাই চায় নিজের মাথা গোঁজার একটি ঠাঁই, নিজের একটি আবাসন; একটি ঠিকানা। মধ্যবিত্তরা তাঁদের সাধ্যানুযায়ী মোটামুটি মানের আবাসন খুঁজে নেয়, অন্যদিকে উচ্চবিত্তরা থাকে বিলাসবহুল আবাসনের খোঁজে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলা করেছে আবাসন খাত, এরই মধ্যে নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অর্থনীতিতেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে আমাদের অর্থনৈতিক ভিত স্থিতিশীল রয়েছে। এটা আমি বলছি না, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ঋণদাতা সংস্থা এবং যারা অডিট করে তারা বলেছেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর বলেছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমাদের অর্থনীতির অস্থিতিশীল অবস্থা কেটে গিয়ে অর্থনীতি দ্রুত বেগবান হবে। আর যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে যায়, তবে আমাদের অর্থনীতি দ্রুত পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন আয়ের মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করতে রাজউক ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, কিছু প্রকল্প চলমান আছে এবং একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আবাসন খাতকে উৎসাহী করতে আমাদের সদ্য গেজেট আকারে প্রকাশিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ড্যাপ-এ অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এলাকাগুলোতে সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পার্ক ও মাঠের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আবাসন গড়ার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাকে একটি সুন্দর ও সুপরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।