বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ক্যান্সার রোগীর জন্য বিশ্বমানের সেবা

সাকিফ শামীম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যান্সার রোগীর জন্য বিশ্বমানের সেবা

ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিফ শামীম বলেছেন, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে নতুনভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ এবং ক্যান্সারে মারা গেছে ১ লাখ ৯ হাজার জন। ক্যান্সার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা এখন দেশেই রয়েছে। দেশে চিকিৎসা নিয়ে মানুষ সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছে। প্রতিদিনই অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে দেশে গড়ে উঠছে নতুন নতুন হাসপাতাল। বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা রোগীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ২০২০ সালের মার্চে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার যাত্রা শুরু করেছে।

হাসপাতালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মূলত পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসার হাসপাতাল। ১৯৯০ সাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে আমরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলাম। পরে দুরারোগ্য রোগের স্পেশাল সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে আলাদা হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিই। এ পরিকল্পনা থেকেই ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হয়। দিন দিন দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। দেশে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে বিদেশে যাচ্ছে। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য মূলত রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়। এমনকি ক্যান্সার শনাক্ত করতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এসব পূর্ণাঙ্গ সেবা নিশ্চিত করেই এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করি; যাতে রোগীরা দেশেই ক্যান্সার রোগের সেবা পায়।

রোগীদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন- জিজ্ঞেস করলে সাকিফ শামীম বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ রয়েছে।  হাসপাতালে প্রায় ৭০ জন চিকিৎসক আছেন। ৩৫ জন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা আছেন। নিয়মিত কনসালট্যান্ট সেবা আছে। ৩০ বেডের কেমো সেন্টার আছে। রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন তিনজন মনোরোগ চিকিৎসক। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করতে হয়। তাই তাদের মানসিক সেবা দেওয়াকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। সব মিলে বিদেশের হাসপাতালের মতোই চিকিৎসাসেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। ভারত ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেওয়া অনেক রোগীকে সেখানকার হাসপাতাল থেকে আমাদের কাছে রেফার করছে।

কী ধরনের ক্যান্সার রোগী বেশি- জানতে চাইলে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ৪৫ শতাংশ স্তন ক্যান্সার, ১৭ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার, ১৫ শতাংশ প্রোস্টেট ক্যান্সারহ বিভিন্ন প্রাণর ক্যান্সার রোগী আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা অনেক। আরও বেশি হাসপাতাল প্রয়োজন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া ও ভোগান্তি কমাতে হবে। কিন্তু অনেকে দেশে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। তবে আমরা যথাযথভাবে সেটা দিচ্ছি। উন্নতমানের যন্ত্রে ক্যান্সার পরীক্ষা হচ্ছে। এটা মূলত সাধারণ মানুষের জন্য গড়া হাসপাতাল। তাই ধনী-গরিব সবার কথা চিন্তা করেই এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তাই কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ প্যাকেজ রেখেছি। এমনকি একেবারে নিম্নবিত্তদের জন্যও বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া ল্যাবএইড ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর ৩০ জন রোগীকে বিনামূল্যে ক্যান্সারের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবীমা থাকলে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুবিধা হতো কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবীমা খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়।  ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় ভারত প্রায় ১৫০ কোটি মানুষকে এ সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এর অন্যতম কারণ স্বাস্থ্যবীমা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের সঠিক ধারণা না থাকা। অথচ মাসে কিছু টাকা জমা রাখার মাধ্যমে একটা সময়ে গিয়ে তারা বড় কোনো ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। কেননা ক্যান্সার কিংবা এমন বড় কোনো রোগে অনেকে নিঃস্ব হয়েও যায়। তাই এ বীমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বিষয়ে সাকিফ শামীম বলেন, বেসরকারির পাশাপাশি এসব দুরারোগ্য, অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালও বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগে কর কমানো উচিত। যন্ত্রপাতি আমদানিতেও করছাড় দেওয়া প্রয়োজন। কারণ কর কমলে আরও কম খরচে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা দিতে পারবে।

হাসপাতাল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সাকিফ শামীম বলেন, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার দেশের সর্বপ্রথম কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ল্যাবএইড ৩০ বছরের আস্থা ও ভরসার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় আধুনিক প্রযুক্তি ও চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে দেশের ক্যান্সার চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে চলেছে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির মধ্য থেকে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে চলেছি আমরা। চেষ্টা করছি একটি সমন্বিত বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যেন সব ধরনের জটিলতা সমাধান করা যায় সে চেষ্টা করা হয়েছে। ক্যান্সার রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমাদের হাসপাতালটিতে ১৫০ বেডের পাশাপাশি রয়েছে স্পেশাল কেমোবেডের ব্যবস্থা। মানসম্পন্ন যত্ন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে- এই ধারণা পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

সর্বশেষ খবর