বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে

ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, সরকারি হাসপাতালের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহামারি কভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু প্রণোদনা পেয়েছে শুধু সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতাল চালাতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। লাঞ্ছিত হন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। দেশে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

‘প্রাইভেট হসপিটালস সোসাইটি অব বাংলাদেশ’-এর এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া করোনা মোকাবিলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কেননা প্রথম দিকে গুটিকয় হাসপাতালে সরকারিভাবে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়। ল্যাব ও শয্যা স্বল্পতা নিয়ে করোনার চিকিৎসা চলমান ছিল। তখন ইউনিভার্সেল হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি করোনা মোকাবিলা করতে না পেরে অনেক হাসপাতাল যখন চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিল, তখন আমরা করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি কিডনি, হার্ট, গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাও দিয়েছি। হাসপাতালে রোগী এলে লাল, হলুদ, সবুজ- এ তিন ট্রায়াজে ভাগ করে চিকিৎসা দিয়েছি। করোনাকালে অনেক দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং অনেক ব্যক্তিও অগ্রিম টাকা দিয়ে সিট বুকিং রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কেননা করোনার মতো মহামারি নিয়ে ব্যবসা করতে চাইনি। করোনা মোকাবিলা করার মাধ্যমে এ দেশের স্বাস্থ্য খাত যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা পরে যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকে সহজ করবে।

ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ৬৬ শতাংশ সেবা দেয় বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষ নেতিবাচক কথা বলে, কারণ সেখানে পকেট থেকে টাকা দিতে হয়। দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু থাকলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এতে কেউ বড় রোগের চিকিৎসা করতে গেলে অধিকাংশ টাকা সেখান থেকে পাবে। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে কোনো পরিবারকে আর পথে বসতে হবে না। তাই দেশে অবিলম্বে এ ব্যবস্থা চালু করার জোর দাবি জানান তিনি।

বেসরকারি হাসপাতালে চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে ডাক্তার, নার্স কিংবা স্টাফ কেউই নিরাপদ নন। রোগীর সঙ্গে দলবেঁধে লোকজন হাসপাতালে এসে অযথা ডাক্তারের সঙ্গে তর্কে জড়ান কিংবা নার্সদের দিকে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনসহ নানা ঘটনা ঘটান। অথচ বিদেশে রোগীর খুবই নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ হাসপাতালে ঢোকার অনুমতি পায় না। এখানে এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন করে হাসপাতালে এমন কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয় বলেই বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষ নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। অথচ তারা বিদেশে গিয়ে এর ১০ গুণ খরচ করছে কিংবা প্রতারিত হচ্ছে কিন্তু তা নিয়ে কোনো কথা বলছে না। দেশে এখন কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। যেটা বিদেশে চিকিৎসা থেকে প্রায় অর্ধেক খরচে। ইউনিভার্সেল হাসপাতালেও এসব প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি স্পেশাল টিম গঠনে কাজ করছি। খুব শিগগিরই সেটা শুরু হবে। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ প্রজেক্ট পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় হয়। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত কেন এ সুযোগ পাবে না? স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর