২৮ মে, ২০২২ ১০:০৭

জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছ থেকে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ নিলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছ থেকে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ নিলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে “শান্তিরক্ষী মেমোরিয়াল সাইট”-এ পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার কর্মসূচি শুরু হয়। 

উল্লেখ্য, প্রতিবছর ২৯ মে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারি শান্তিরক্ষীদের স্মরণে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব ইউএন পীসকিপার্স’ (আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস) পালন করা হয়। সে উপলক্ষে এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জনগণ শান্তি অগ্রগতি: অংশিদারিত্বের শক্তি’। দিবসটিতে শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি এবং যাঁরা শান্তির জন্য জীবন হারিয়েছেন তাঁদের মরণোত্তর ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করে পবিত্র স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হয়। 

এবারের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় গত বছর আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের ২ জনসহ ৪২ দেশের ১১৭ জন শান্তিরক্ষীকে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য এই মেডেল প্রদান করা হয়। 

জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ (Antonio Guterres) বাংলাদেশসহ ৪২টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে স্ব স্ব দেশের মেডেল তুলে দেন। 

এ সময় মহাসচিব বলেন, ৪২টি দেশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম-জাতি-গোত্রের শান্তিরক্ষীরা এলেও তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন এবং তা হচ্ছে ‘বিশ্ব শান্তি’। সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তারা আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে জাতিসংঘের সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় তাঁদের এই আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি। 

উল্লেখ্য, গত ৭ দশকে এই মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের ১৬১জনসহ সারাবিশ্বের ৪২০০ জন শহীদ হয়েছেন। 

মহাসচিব বলেছেন, এসব আত্মোৎসর্গকারি শান্তিরক্ষীগণের পরিবারের সদস্যগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাঁরা সবসময় আমাদের হৃদয়ের গভীরতম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন। শান্তিরক্ষীদের অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে মহাসচিব বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্যদিয়ে শান্তিরক্ষা মিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত জনপদে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসী হামলা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া, সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাগাতার মিথ্যাচার ডিঙ্গিয়ে শান্তিরক্ষীরা সরেজমিনে ভয়ংকর একটি অবস্থার মধ্যে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। 

কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী দুই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মেজর এ কে এম মাহমুদুল হাসান ও ল্যান্সকর্পোরাল মোঃ রবিউল মোল্লা এ মেডেল পান। মেজর হাসান সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ নিয়োজিত মিনুসকা (MINUSCA) মিশনে এবং ল্যান্স কর্পোরাল মোল্লা দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত আনমিস (UNMISS) মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হন। 

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের কাজ থেকে বাংলাদেশের পক্ষে এ মেডেল গ্রহণ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। 

এ সময় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যেতে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে”। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ মেডেল বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে রক্ষিত শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। 

শোকবার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ব শান্তির জন্য পবিত্র দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ তার অনেক সাহসী সন্তানকে হারিয়েছে। তিনি শান্তিরক্ষায় জীবনদানকারী সকল বীর শান্তিরক্ষীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং অপূরণীয় এই ক্ষতির জন্য তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮০২ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের ৯টি মিশনে কর্তব্যরত রয়েছেন। আরো উল্লেখ্য, করোনা অতিমারিজনিত কারণে দুই বছর পর আবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে স্বশরীরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস পালন করা হলো।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর