সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

এ কেমন হঠাৎ বৃষ্টি

ইকবাল খন্দকার

এ কেমন হঠাৎ বৃষ্টি

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বাজারে আগুন। কিন্তু নেভানোর কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছিল না। শেষে এগিয়ে এলো বৃষ্টি। নেভানোর সব রকম চেষ্টাই করল। যথেষ্ট পানি ঢালল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগুন কি আদৌ নিভেছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে একটা গল্প শুনতে হবে। এক লোকের খুব ইচ্ছে লম্বা হবে। কিন্তু কীভাবে লম্বা হওয়া যায়, তার জানা নেই। তাই গেল পরামর্শকের কাছে। পরামর্শক তাকে জানাল, যদি তুমি রোজ রিংয়ে ঝোলো, তাহলে একটু না একটু লম্বা হবেই। লোকটা ওইদিনই রিং কিনল। আর নিয়ম করে ঝুলতে শুরু করল। ছয় মাস পরের ঘটনা। লোকটাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হলো। তার সমস্যা, অতিরিক্ত রিংয়ে ঝোলার কারণে তার বডি লম্বা না হলেও হাত লম্বা হয়ে গেছে। এতটাই লম্বা হয়েছে যে, মাটিতে গিয়ে ঠেকে। ফলে আঙ্গুলের আগায় ময়লা লাগে। মহাঝামেলা। গল্পটা কতটুকু সত্য, জানা যায়নি। তবে লম্বা হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে হিতেবিপরীত হয়ে যাওয়া, আর বাজারের আগুন নেভাতে ‘বৃষ্টি মহোদয়’-এর এগিয়ে আসা মোটামুটি সমযন্ত্রণার। কারণ, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে কোনো কোনো জিনিসের দাম আরও বেড়েছে। বাসায় এসে জুড়ে বসা বেহায়া গেস্টের মতো বৃষ্টি যদি মনে করে আরও কদিন থাকবে, তাহলে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। মোটকথা, আমরা আছি ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ অবস্থার মধ্যে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বৃষ্টি এসেছে ভালো কথা। কিন্তু খারাপ কথা হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়েছে। হ্যাঁ, ভালো কিছু হতে পারত, যদি বৃষ্টিটা জায়গা মতো পড়ত। আমি জানতে চাইলাম, জায়গা মতো বলতে? প্রতিবেশী বললেন, রান্নাঘরে। মনে করেন রান্নাঘরের ছাদ ফুটো হয়ে যদি ঝুম বৃষ্টি হতো আর রান্নাঘরটা পানিতে ভেসে যেত, তাহলে রান্নাও করতে হতো না, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসেরও দরকার হতো না। ফলে বাজারেও যেতে হতো না। কথাটা শুনে আমি প্রতিবেশীর মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। তার কথায় তো বটেই, চোখে-মুখেও যুক্তি খুঁজলাম। কিন্তু না পেয়ে একটা কৌতুক মনে করার চেষ্টা করলাম। এক লোক তার বাড়িওয়ালাকে বলল, ঘরে তো বৃষ্টির পানি পড়ে। অতএব ভাড়া কম নেন। বাড়িওয়ালা লোকটার শেষের কথাটা মানে ভাড়া কমানোর কথাটা আমলে না নিয়ে চিৎকার করে উঠল, বলেন কী! ঘরে বৃষ্টি পড়ে! তাহলে তো পরের মাস থেকে ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। লোকটা অবাক হয়ে বলল, কেন? বাড়িওয়ালা বলল, কেন আবার! এতদিন ধরে আপনার আফসোস ছিল, ছাদ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আপনাকে ছাদেও যেতে দেওয়া হয় না, বৃষ্টিতেও ভিজতে দেওয়া হয় না। এখন ঘরে পানি পড়ে। তার মানে ছাদে না গিয়ে ঘরে বসেই আপনি পাচ্ছেন বৃষ্টিতে ভেজার সুবিধা। এত সুবিধা যে বাসায়, সে বাসার ভাড়া বাড়বে না তো কোন বাসার ভাড়া বাড়বে? আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস না হলেও মাঝারি মানের দৃঢ় বিশ্বাস, বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে যারা তরিতরকারির দাম আরও বাড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যেও মোটামুটি এই বাড়িওয়ালার যুক্তির মতোই যুক্তি বিরাজমান। আবার এমন যুুক্তিও বিরাজমান থাকতে পারে। এমন যুক্তি বলতে কেমন যুক্তি, সেটা বোঝাতে হলে একটা গল্প শোনাতেই হবে। এক লোক নিচতলায় থাকে। তো বৃষ্টির পানিতে তার বাসা সয়লাব হয়ে গেল। লোকটা বাড়িওয়ালাকে বিষয়টা জানিয়ে বলল, সে আর থাকবে না। হয় উপরের কোনো তলায় উঠে যাবে, না হয় অন্য কোথাও চলে যাবে। বাড়িওয়ালা বলল, আস্তে বলেন। কারণ, আপনি যে বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন, এটা শুনলে অন্য ভাড়াটিয়ারা এই বাসায় আসার জন্য হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেবে। বাড়িওয়ালার কথায় তো ভাড়াটিয়া তাজ্জব। বলেন কী! বৃষ্টির পানিতে একটা বাসা ভরে গেছে, সেই বাসায় ওঠার জন্য অন্য ভাড়াটিয়ারা হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেবে, এটা কোনো কথা? বাড়িওয়ালা বলল, জি, এটাই কথা। কারণ, বৃষ্টির পানিতে বাসা ভরে যাওয়ার কারণে এখন খাটের নিচে ইঁদুরের কল পাতলে সেটাতে মাছ ধরা পড়ছে। সুতরাং মাছ কেনার জন্য বাজারে যেতে হচ্ছে না।

ভালো না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর