শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বৃত্তবন্দি

অঞ্জন আচার্য

বৃত্তবন্দি

ওকে কাট!

ডিরেক্টর জোরে চিৎকার দেন।

একটা অ্যাকশন সিন শেষে ঘেমে এসে চেয়ারে বসে সাহেব খান। সঙ্গে সঙ্গেই তার অ্যাসিসট্যান্ট সাজেদুল এসে বলে, বস কী দেব?

-সিগারেট। বলে হাত বাড়িয়ে দেয় সাহেব।

বেনসনের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সাহেবের হাতে দেয় সাজেদুল। লাইটারটা জ্বালিয়ে সাহেবের মুখের সামনে ধরে। সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়, বগবগ করে ধোঁয়া ছাড়ে। তৃপ্তির টান। মুখটা সরু করে গোল গোল রিং তৈরি করতে ইচ্ছে করে। পারে না। আজ সাহেবকে অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি ডিসটার্ব মনে হচ্ছে সাজেদুলের।

-বস, আজ দৈনিক দিনের আলো পত্রিকায় আপনাকে নিয়ে স্টোরি করেছে। দেখেছেন?

সাহেব কোনো কৌতূহল দেখায় না। পাশে বসা সাজেদুলের দিকে ঘাড় কাত করে তাকায়।

-আপনাকে জড়িয়ে ববি ম্যাডামের একটা রিউমার ছাপিয়েছে। দেখেন বস, কী লিখেছে।

সাহেব এক পলক চোখ বুলায় সাজেদুলের মেলে ধরা পাতায়। আজকাল এসব স্টোরিতে তার পিত্ত জ্বলে। মনে হয়, কেউ যেন পেট্রল ঢেলে ম্যাচ জ্বালিয়েছে।

মুখটা ঘুরিয়ে সাহেব শুধু বলে, রাবিশ!

সাজেদুল বুদ্ধিমান ছেলে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় মাস্টার্স করা। অনেক চেষ্টা-তদবির করেও কোথাও কোনো কাজ জুটছিল না তার। দূর-সম্পর্কের এক দুলাভাইয়ের হাত ধরে এই ফিল্ম লাইনে আসা। তা-ও আবার যেনতেন কাজ নয়। মেগাস্টার সাহেব খানের পিএসের কাজ।

ভালো একটা ছেলের খোঁজ করছিল সাহেব খান কয়েক দিন ধরেই। মেকআপ রুমে হাবিবুল্লাহর মেকাপ নিতে নিতে একদিন কথায় কথায় বলে, হাবিব ভাই, তোমার জানাশোনা কোনো ছেলে আছে? শহীদুলকে আউট করে দিয়েছি, জানো তো। শালা হিরো হওয়ার ধান্দা করছে। ইদানীং ববির সঙ্গে জুটেছে। ববি নাকি তাকে বলেছে, প্লিজড করতে পারলে হিরো বানাবে। ব্লাডি ফুল! ববির সঙ্গে শুলেই বুঝি নায়ক হওয়া যায়? ইন্ডাস্ট্রি চলে আমার কথায়। ওকে আমি হাপিস করব।

হাবিব চোখ বড় বড় করে বলে, খুন করার জন্য?

-আরে ধুর! ওই মাছি মেরে হাত নষ্ট করার লোক সাহেব খান নয়। একটা অ্যাসিসট্যান্ট চাচ্ছি।

দুদিন পরেই সাজেদুলকে নিয়ে এসে হাজির হাবিব ভাই। এক দেখাতেই সাজেদুলকে ভালো লেগে যায় সাহেবের। কথায় বিনয় ও ভদ্রতা দুই-ই আছে। তার ওপর সাহেবের মস্ত বড় ফ্যান সে। থাকবেই-বা কেন? এখন নায়ক বলতে তো এক সাহেব খানই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি চালাচ্ছে। কোনো অল্টারনেট নেই। সাইনিং মানিই আজকাল পঞ্চাশ লাখের নিচে নেয় না সাহেব। ছবির বাজেট যা-ই থাকুক, রেট তার সবচেয়ে হাই। দশ কোটি। গরিব দেশের ধনী নায়ক তাকে বলে হয়তো!

শুরুর দিন থেকেই নিজের সব কাজ বুঝে নেয় সাজেদুল। বাড়তি কিছু কাজও সে করে। তবে বাড়তি কথা সে কখনো বলে না। কোন পত্রিকার বিনোদন পাতায় সাহেবকে নিয়ে কী লিখল, ঠিক সে জোগাড় করে নেয়। সময়-সুযোগমতো সেগুলো ঠিক বলে শোনায় সাহেবকে।

সে একদিন ছিল সাহেবের। সাহেব তখন একটা কি দুটো ছবি করেছে। নায়েকের বন্ধুর রোল। এক ছবিতে কী এক কারণে নায়কের সঙ্গে পরিচালকের লেগে যায়। শুটিং প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সাহেব দেখতে সুন্দর। পরিচালকের মনে ধরে, সাহেবকে দিয়েই সিনেমা করবে। প্রডিউসারকে ম্যানেজ করে। মোটামুটি চলেছিল সিনেমাটি। তারপরেও দমে যাওয়ার নয়। যে করেই হোক মাটি কামড়ে থাকতে হবে এফডিসিতে। স্কুলের বন্ধু নিয়ামুল করিমের সঙ্গে পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিকের বেশ আলাপ আছে শুনেছে। নিয়ামুল নিজেও ফ্রিল্যান্সিং করে। সাবেক বিখ্যাত ফিল্ম আর্টিস্টদের ইন্টারভিউ। নিয়ামুলকে একদিন আচ্ছামতো ধরে সাহেব। দোস্ত, আমাকে নিয়ে একটা নিউজ করে দে না। নতুন ছবি করছি। নায়কের রোল।

বিনা পয়সায় কিছুই হয় না, সাহেব জানে সেটা। তাই বন্ধুটিকে সে হাজার দুয়েক টাকা দিয়ে বলে, একটু ম্যানেজ করে দে না!

নিয়ামুলের সাফ জবাব, এ দিয়ে হবে না। মিনিমাম পাঁচ লাগবে।

পাঁচ হাজার! নব্বইয়ের দশকে পাঁচ হাজার টাকা নেহাত কম নয়। তার ওপর সাহেবের ইনকাম নেই বললেই চলে। ময়মনসিংহ থেকে কেবল ঢাকায় এসে পা ফেলেছে। চোখভরা স্বপ্ন। সুপারস্টার হিরো হবে। আদাবরের একটা মেসে থাকে দু-তিনজন মিলে। অগত্যা পাঁচ হাজারেই রাজি হলো সাহেব। নিয়ামুল তাকে নিয়ে গেল এক পত্রিকার অফিসে। সেই অফিসের নিচে ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসিয়ে ভিতরে যায় নিয়ামুল। এরপর এক লম্বামতো লোককে ধরে নিয়ে আসে সে। তিনি এসে সাহেবকে এক-দুটি প্রশ্ন করেন। বলেন, ওকে, হয়ে যাবে।

সপ্তাহখানেক পর সাহেবের ছবিসহ একটা ছোট্ট নিউজ ছাপা হয়। এই দেখে সাহেবকে আর পায় কে! মনে মনে সে ভাবে, এই তো সে বিখ্যাত হয়ে গেছে। লোকাল বাসের বদলে রিকশায় করে চড়ে বেড়ায়। অকারণে রাস্তায় হাঁটে। আশপাশের লোকেদের দিকে দেখে, কেউ তাকে নজর করছে কি না? কেউ বলছে কিনা, ওই দেখো, হিরো যাচ্ছে। তবে কয়েক দিন এমন করেও আলাদা কোনো দৃশ্য সাহেবের চোখে পড়ে না। ঢাকার মানুষ যেমন রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলে, তেমনি ছুটে যায়। তাকে দেখে কেউ থমকে দাঁড়ায় না, হাত মেলায় না। ছবি তুলতে বা অটোগ্রাফ নিতে কেউ এগিয়ে আসে না। আশাহত হয়ে ওঠে সাহেব। তারপরও শেষ দেখতে চায় সে।

সাহেব খানের সেই স্ট্রাগলের দিন বহুদিন আগেই ফুরিয়েছে। এখন পত্রিকা অফিসে যাওয়া তো অনেক দূর, আমন্ত্রণ করেও নিতে পারে না কেউ। সময় কোথায় যাওয়ার? সময় যে একেবারেই মেলে না, তা নয়। কিন্তু নিজেকে সস্তা করতে চায় না। ইতিমধ্যে সেই থিওরিটা শিখে নিয়েছে সে। সাজেদুলের কথায় সাহেব সম্বিত ফিরে পায়।

-বস, দৈনিক কালের বেলা পত্রিকার এক ছোকরা অনেকক্ষণ হলো বসে আছে আপনার সঙ্গে একটু মিট করতে। বাইরে বসিয়ে রেখেছি। স্টুডিওতে ঢুকতে দিইনি। কী করব বস?

-অন্য আরেক দিন আসতে বলো। আর ব্যাগের থেকে ব্ল্যাক লেভেলটা বের করো।

সাজেদুল হুকুমের গোলাম। তালে তালে শেখা তার রপ্ত হয়ে গেছে। কোনো কিউরিসিটি না দেখিয়ে সাহেবকে এক পেগ হুইস্কি বানিয়ে দেয় সে। এমন সময় পাশে এসে বসেন ডিরেক্টর শাহিন ইকবাল।

-কী ব্যাপার হিরো, এই লাঞ্চ ব্রেকে পেগ মারছো?

সাহেব মৃদু হেসে বলে, আপনার আজ্ঞা হয় স্যার। এ কি একা একা খাওয়ার জিনিস?

সাজেদুলকে ইশারা করে ডিরেক্টরকেও বানিয়ে দিতে। ভালোই চলছিল আড্ডা। যদিও সেই আড্ডার বেশির ভাগ কথাই কে কার সঙ্গে শুচ্ছে, তা নিয়ে। চার পেগ খাওয়ার পর ডিরেক্টর উঠে দাঁড়ায়। বলে, হিরো, আজ উঠি। সন্ধ্যায় আবার আমার একটা বিয়ের দাওয়াত আছে। তোমার ভাবীকে নিয়ে সেখানে যেতে হবে। হোম মিনিস্ট্রি ইস্যু, বোঝই তো।

সাহেবেরও তিন পেগ হয়ে গেছে এর মধ্যে। হালকা ঝিমুনি লাগছে। ক্লান্ত শরীর বলেই হয়তো লিকিউডটা এত অল্পতেই চেপে বসেছে। একের পর এক সিগারেট খেয়ে যায় সাহেব। ববির কথা মনে পড়ে। তার সঙ্গে একসময় প্রেম ছিল সত্যি। এখন তো সেটা সিগারেটের অ্যাশট্রে। তারপরেও পাবলিক তাকে ছাড়ে না।

গত সপ্তাহে মার্সেডিস ব্র্যান্ডের ছেড়ে বিএমডব্লিউ কিনেছে সাহেব খান। গাড়ি কেনা তার একটা নেশা বলা যায়। এ নিয়ে কত রং চড়িয়ে বিনোদন পাতায় নিউজ হয়।

-নিউজপেপারগুলোর আজকাল বুল শিট হয়ে পড়ছে। কয়টার সময় ঘুম থেকে উঠি, সকালে কী দিয়ে নাশতা করি, কোন কালারের আন্ডারওয়্যার পরি-এসব এখন তাদের নিউজ আইটেম। কী বলো সাজেদুল?

সাজেদুল হাসে। বলে, তাদেরও তো চলতে হবে বস। আপনি মেগাস্টার। আপনাকে নিয়ে লিখলে পেপারের কাটতি বাড়ে। আর পাবলিকও এসব খায়।

-হুম। ভালো বলেছো। পাবলিক খায়। পাবলিক হলো ছাগল। তাদের যা গেলানো হবে, তাই গিলবে। যাই হোক, রহমতকে একটা কল দাও তো। বলো, গাড়ির চাবিটা দিয়ে যেতে। আজ অনেক দিন পর নিজে ড্রাইভ করতে ইচ্ছে করছে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে রহমত এসে সাজেদুলের হাতে গাড়ির চাবিটা দিয়ে যায়। সাহেবকে একটা সালাম দিয়ে বলে, স্যার, একদিন ছুটি পেলে একটু বাড়িতে যেতাম। বউটার খুব অসুখ।

সাহেব হাত ইশারায় বলে দিল, ছুটি মঞ্জুর। হাসিমুখে রহমত ফিরে যায়।

সাজেদুল বলল, আমি সঙ্গে যাব বস?

-না, আমাকে একাই যেতে দাও। বলেই উঠে দাঁড়াল সাহেব।

দূরে ছোকরা রিপোর্টারটা এখনো বসে আছে দেখে সাজেদুলের দিকে রাগের দৃষ্টিতে তাকায় সাহেব। সাজেদুল ইতস্তত হয়ে বলে, আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি বস। আপনি চলেন। সাংবাদিক ছোকরা কাছে আসতে চাইলে সাজেদুল তাকে বাধা দেয়। বলে, ভাই, ডিসটার্ব করবেন না। আমাকে পরশু দিন একটা কল দিয়েন। তখন কথা হবে।

গাড়িটি স্টার্ট দেওয়ার সময়ই মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল সাহেবের। এফডিসি গেট দিয়ে ডানে মোড় নিয়ে সোনারগাঁও মোড় পর্যন্ত যেতেই মনটা বিগড়ে যায়। এই সিগন্যালটা অনেকক্ষণ হলো লক হয়ে আছে। কিছুতেই ছাড়ছে না। মনে হচ্ছে গাড়ি থেকে বের হয়ে ট্রাফিককে কষিয়ে একটা লাথি মারতে। কিন্তু সেই উপায় কি আছে? বের হলেই তো পাবলিক হইহই করে উঠবে। আশপাশ ঘিরে ধরবে। এতে বরং ট্রাফিক জ্যাম আরও বাড়বে। পরের দিন বড় বড় করে নিউজও হবে, ট্রাফিক পুলিশকে প্রহার করলেন মেগাস্টার সাহেব। পাবলিক ইমেজের বিষয়! কত কিছু ভাবতে হয় তাকে।

কিছুই করার নেই ভেবে এক জায়গাতেই অনেকক্ষণ স্থির বসে রইল সাহেবের গাড়ি। সময় যেন ফুরাতেই চাচ্ছে না। এক মিনিটের পথে প্রায় আধা ঘণ্টা বসে থাকতে কার ভালো লাগে? মেজাজ বিগড়ায় না? শালার নেশাটাই ছুটে গেছে।

সাইড উইন্ডো নামিয়ে মুখ বের করে দেখবে, তারও উপায় নেই। পাশেই রিকশা, সেখানে বসা দুই লোক। সাহেব গাড়িতে আছে জানাজানি হলেই বিপদ।

সিগন্যালটা একটু একটু ছাড়ে মনে হয়। কিছু দূর গিয়ে আবার থেমে যায়। এখনো সোনারগাঁও হোটেল অবধিই পৌঁছানো হলো না। উত্তরা যাবে কী করে আজ? রাস্তায় কী মরেছে?

ফুটপাতের পাশ ধরে একটা ছোট্ট মিছিল চলে যায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগান দিতে দিতে। আন্ডাবাচ্চা ছেলেমেয়ে, স্কুলের ড্রেস পরা। ওরা আবার রাস্তায় নামল কেন? ট্রাফিকের ডিআইজিকে কল দেয় সাহেব।

দুটি রিং বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ডিআইজি কল রিসিভ করেন। সাহেব খানের কল পেয়ে তিনি তো আহ্লাদে আটখানা। কী অবস্থা হিরো?

-অবস্থা তো আপনাদের হাতে। কারওয়ান বাজারে আজ কী হয়েছে? যেতে পারছি না কেন?

-আর বলবেন না। স্কুলের ছেলেমেয়েরা রাস্তা ব্লক করেছে। সকালে রামপুরায় রজনী পরিবহনের বাস চাপা দিয়ে মেরেছে এক ছাত্রকে। স্পট ডেড। এ নিয়ে সকাল থেকেই রাস্তা গরম। আমরা হার্ট অ্যান্ড সোল ট্রাই করছি, রাস্তা ক্লিয়ার করতে। কিন্তু স্টুডেন্টরা কিছুতেই শুনছে না। তাদের তো আর প্যাদানো যায় না। অ্যান্টি গভর্মেন্ট পলিটিক্যাল পার্টির ইস্যু হতো, কখন সাফ করে ফেলতাম!

-তাহলে কী করব এখন? বসে বসে...ছিঁড়ব?

-একটু ধৈর্য ধরেন হিরো। আমি সেখানের সার্জেন্টকে বলে দিচ্ছি যত আরলি পসিবল রোড ক্লিয়ার করতে।

মিনিট দশেক পর এর ফলাফল মিলল। সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ারা ক্লিয়ার হলো। সাহেব এক টানে মোড় ক্রস করে। পাশাপাশি আরও কয়েক শ গাড়িও পাস করে আগে-পরে। ডানে মোড় নিয়ে ফার্মগেট গিয়ে তো চরম বিপদে পড়েছে। যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। পুরো ঢাকায় আজ হলো কী? দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলল। এদিকে মাল টানার পর থেকেই হালকা প্রস্রাব পেয়েছে সাহেবের। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা যাকে বলে! বাঁ দিকের মিররে চোখ যায়। দূরে রাস্তার পাশে এক লোককে দেখে ইলেট্রিক একটা পিলারের নিচে বসে পড়েছে। পুরুষ মানুষগুলো শালা ইদানীং কুত্তা হয়ে গেছে। পিলার দেখলেই সেটাকে পাবলিক টয়লেট ভাবে। দৃশ্যটা দেখে আরও মন খিচে যায় সাহেবের। প্যারিস, লন্ডন, সিডনি-কত শত জায়গাতে শুটিং করেছে সে। কোথাও এমন কুত্তার মতো কাউকে মুততে দেখেনি। ওপেন সেক্সের দেশগুলোতে এ ভদ্রতাটুকু মেনে চলে। মিনিমাম লজ্জাবোধটুকু আছে। দুনিয়ার মানুষের সামনে হাত দিয়ে কিছু একটা আড়াল করেই পুরুষদের এমন বসে পড়াটা মোটেও ভালো চোখে দেখে না সাহেব। একসময় সে যে এভাবে হিসু করেনি, তা নয়। বহুবার করেছে। তখন তো সে আর সাহেব খান ছিল না। ছিল ছাপোষা মৈসিংয়ের সবু মিয়া।

ফার্মগেট ক্রস করতেও অনেক সময় পার হয়ে যায় সাহেবের। বিজয় সরণির রাস্তাটা একটু ফাঁকা পায়। কিন্তু জাহাঙ্গীর গেটের কাছে আসতেই আবার সেই লক। মহাখালীতেও সম্ভবত রাস্তা অবরোধ করেছে স্টুডেন্টরা। ভয়াবহ অবস্থা! ফ্লাইওভারের ওপর সারি সারি গাড়ি ঝিমুচ্ছে। একটুও নড়ার নাম নেই। বুঝেছে আজকে খবর আছে! এদিকে প্রস্রাবের বেগ বেড়েই চলে সাহেবের। মনে হয় এখনই গাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়তে। রাত হলেও না-হয় কথা ছিল। অন্ধকারে ঢুকে যেত। কিন্তু এখন জুন মাসের তো বিকাল। সন্ধ্যা হতেই বহু দেরি, রাত তো আরও দূর।

এভাবে বসে থাকতে ভীষণ অস্বস্তি লাগে সাহেবের। কী করবে বুঝতে পারে না। গাড়িতে কোনো পলিব্যাগ আছে কি না খোঁজে। এর মধ্যে প্রস্রাব করে তারপর সেটি গিঁট দিয়ে রেখে দেবে। যাওয়ার পথে নিরাপদ কোনো জায়গায় ফেলে দিলেই কাম সাফা। কিন্তু কাজের সময় কি আর সবকিছু পাওয়া যায়? দাঁত কামড়ে বসে থাকে গাড়িতে। একটু একটু করে গাড়ি এগিয়ে চলে। আবার ব্রেক কষে। মহাখালী ফ্লাইওভারে কোনোরকম উঠতে পারে সাহেব। প্রস্রাব আর চেপে রাখতে পারে না। তলপেট ফুলে ওঠে। এমন প্রস্রাবের বেগ তো শুনেছে সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের হয়, কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে পড়ে! তবে কি তার সুগার পেয়ে বসেছে? মাথার মধ্যে আর কোনো চিন্তা আসে না। ছোটবেলায় বাসে বমি বমি ভাব এলে মা বলত, মনটাকে অন্যদিকে নিয়ে যা, ঠিক হয়ে যাবে। মনটাকে অন্যদিকে ঘোরাতেই ডিভিডি প্লেয়ারে একটা মেলোডি কালেকশন ছাড়ে। বিরক্তি নিয়ে সেটা বন্ধ করে সাহেব। ফ্ল্যাটে গিয়ে কখন প্রস্রাব করবে, এখন মাথার মধ্যে একমাত্র সেটাই বারবার ঘুরেফিরে আসছে। হঠাৎ নিজের চেতনায় ছেদ পড়ে। প্যান্টের জিপারের তলা থেকে সিরসির করে কী যেন বের হয়। নিজের প্যান্টের দিকে তাকায় সাহেব। তাকাতে না তাকাতেই অনর্গল বেরিয়ে আসে গরম তরল। নিজেকে আপ্রাণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। অন্তত দামি গাড়িটার কথা ভেবে, পারে না। একসময় বাঁধ ভেঙে যায়। সিট ভাসিয়ে প্রস্রাব করে ফেলে সে। আস্তে আস্তে শরীর আর নিজের কাছে থাকে না। শরীরকে তার মতো ভাসতে দেয়। ফোয়ারার চারপাশের মতো ভেসে যায় সিট। সিট ভেসে উপচে পড়ে। ব্রেক ও এসকেলেটর ভিজিয়ে ফেলে। সংগম শেষে ক্লান্ত শরীরের মতো হেলে পড়ে সাহেব। পিঠে হেলান দিয়ে বসে। অনন্ত সুখে দোল খায় সাহেব, খেতে ভালো লাগে তার। প্রস্রাব করতে করতে পুরনো এক স্মৃতি ভেসে আসে তার। রাতে ঘুমের মধ্যে মা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ির পাশের জবাগাছ তলায়। টলতে টলতে সে যাচ্ছে। একসময় প্যান্ট খুলে পানির পাইপ নামে।

সিগন্যাল কখন ছেড়েছে, সেই খেয়াল নেই সাহেবের। পেছন থেকে তীব্র হর্ন বাজিয়ে যায় গাড়ি। সেই শব্দ শোনার টাইম নেই সাহেব খানের। একমনে হিসু করতে করতে ভীষণ ঘুম পায় তার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর