শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
৬০ বছর ধরে সংগ্রহ করছেন তিনি

মুদ্রা জাদুঘর গড়তে চান বাচ্চু

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মুদ্রা জাদুঘর গড়তে চান বাচ্চু

মুদ্রা জাদুকরের নাম মাহফুজার রহমান বাচ্চু। তার সংগ্রহে রয়েছে হাজার হাজার টাকা। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। শখের বশে করা এই সংগ্রহশালার এখন ব্যাপ্তি বেড়েছে। ৬৯ বছর বয়সী বাচ্চুর এখন শখ কাগজের মুদ্রার একটি বড় জাদুঘর গড়ার। যেখানে নতুন প্রজন্ম মুদ্রার জাদুঘর দেখে ইতিহাস জানতে পারবে। জানা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় মাঝিড়া বন্দরে তার বাড়ি। পেশায় ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। চার সন্তানের জনক বাচ্চু মিয়া এখন অবসরপ্রাপ্ত। অবসর সময়ে মুদ্রা সংগ্রহ তার নেশায় পরিণত হয়েছে। যখন যেখানে মুদ্রা পেয়েছেন তা সংগ্রহ করে রেখেছেন। ব্যতিক্রমী স্বপ্নচারী মানুষ মাহফুজার রহমান বাচ্চুকে তার কর্মপরিধিই এনে দিয়েছে ভিন্ন পরিচিতি। হরেক রকমের দেশি-বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন তিনি। ১৯৬২ সালে তার বয়স যখন ৭ তখন থেকে তিনি টাকা সংগ্রহ শুরু করেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে জন্ম নেওয়া একটি শখকে এখনো লালন করে যাচ্ছেন। সে শখটি গতানুগতিক কোনো শখ নয়, বিভিন্ন দেশের কাগজের নোট ও মুদ্রা সংগ্রহের শখ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সে শখ পরিণত হয়েছে নেশায়। ১৯৫৫ সালের ২৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন মাহফুজার রহমান। পরে কর্মজীবনে তিনি সিনিয়র অফিসার হিসেবে জনতা ব্যাংকে যোগদান করেন। তিনি সেই জমানো টাকাগুলো বিক্রির জন্য কখনই চিন্তা করেননি বরং নেশা ধরে গিয়েছিল সংগ্রহের। এখন তার সংগ্রহে রয়েছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মালদ্বীপ, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, নেপাল, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, ইথিওপিয়া, জর্ডান, ভেনেজুয়েলা, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, উগান্ডা, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, কুয়েত, কাতার, দারুস সালামসহ শতাধিক দেশের কাগজের নোট। বাংলাদেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত সব ধরনের টাকা ও মুদ্রার বিশাল এ ভান্ডার। সংগ্রহের এ কাজটি সহজও ছিল না। বরং ছিল কষ্টসাধ্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যয়বহুলও। অনেক কষ্ট হলেও তার এ নেশা কাটেনি। মাহফুজার রহমান বলেন, ‘বিরল টাকার খোঁজ পেয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গেছি। এমনও ঘটেছে পুরনো টাকা কিনেছি দুই থেকে তিন গুণ টাকা দিয়ে। কেউ বিভিন্ন দেশে গেলে তাদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। হজে গিয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন দেশের টাকা সংগ্রহ করেছি।’ তার এক ছেলে দুবাই থাকত। তার মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। এখন বন্ধু-প্রতিবেশী-স্বজনরাই বিভিন্ন দেশের টাকা বা মুদ্রা পেলে তার জন্য সংগ্রহ করে বাড়ি পৌঁছে দেন। চেনা-পরিচিতজনরা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পথে সেসব দেশের নতুন-পুরনো মুদ্রা তার জন্য নিয়ে আসেন।

মাহফুজার রহমান বাচ্চু জানান, তার কাছে যেসব টাকা আছে তা নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। টাকার লেখা, সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষর, নকশা সবই তার নখদর্পণে। তিনি আরও জানান, ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশের সব ধরনের কাগজের নোট ও মুদ্রা রয়েছে। প্রতিটি নোটেই ভিন্নতা আছে। সেটা লেখায়, হয়তো বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর বা প্রতীকী ছবিতে। তাই তিনি কোনো নোটকেই সংগ্রহ করতে বাদ রাখেননি। কেউ সহযোগিতা করলে তা দিয়ে একটি মুদ্রার জাদুঘর গড়তে চান বাচ্চু।

সর্বশেষ খবর