শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
পর্যটন

নয়ন জুড়ানো সাগরকন্যা

উত্তম কুমার হাওলাদার, পটুয়াখালী

নয়ন জুড়ানো সাগরকন্যা

সাগরকন্যা কুয়াকাটা। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সাগরপাড়ের জনপদ। ভ্রমণ বিলাসী ও পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমণের অন্যতম মনোরম ও মনোমুগ্ধকর স্থান। এখানে এলে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত দৃশ্যপট অবলোকনের পাশাপাশি প্রাচীন পুরাকীর্তি বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার ও প্রাচীন কুয়া স্বচক্ষে দেখার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। নিজের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে কুয়াকাটা ভ্রমণের বিকল্প নেই। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার এ সৈকতে রয়েছে চোখ ধাঁধানো সুন্দরের সমাহার। এ ছাড়াও রয়েছে লাল কাঁকড়ার অবিরাম ছোটাছুটি। দেখা যায় সূর্যের সঙ্গে নোনা জলের গভীর মিতালির দৃশ্য। আবার দেখা যায় সাগর থেকে ভেসে আসা বালুর সঙ্গে মিশে থাকা অসংখ্য ছোট-বড় ঝিনুক। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় ফলদ বৃক্ষের সমাহার। রয়েছে আন্ধারমানিক নদীসহ তিন মোহনার দৃশ্য। আর এ আন্ধারমানিক মোহনার উল্টো দিকে রয়েছে ফাতরার বিশাল বনাঞ্চল, শুঁটকি পল্লী, লাল কাঁকড়ার চর ইত্যাদি। নতুন করে সাগরের মাঝে জেগে উঠেছে চর বিজয়। আর এ চর বিজয়ে রয়েছে অসংখ্য লাল কাঁকড়াসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। জিরো পয়েন্ট থেকে অদূরেই রয়েছে পর্যটন পল্লী গঙ্গামতি সৈকত। কুয়াকাটার অবিচ্ছেদ্য অংশ এখানকার আদি বাসিন্দা উপজাতি রাখাইন সম্প্রদায়। এদের ভিন্ন আদলের জীবনযাত্রা অবলোকনের সুযোগ মনে এনে দেয় ভিন্নমাত্রার অনুভূতি। জানা গেছে, প্রায় সোয়া ২০০ বছর আগে আরাকান থেকে বিতাড়িত দেড় শ রাখাইন পরিবার নৌকায় ভাসতে ভাসতে সাগরপাড়ে নোঙর করে। শ্বাপদসংকুলের এ জনপদে গড়ে তোলেন প্রথম মানব বসতি। খাওয়ার নিরাপদ পানি ছিল না, তাই রাখাইন পরিবারগুলো কুয়া খনন করে মিঠা ও নিরাপদ পানি সংগ্রহ করে। সেই কুয়ার নামানুসারে আজকের কুয়াকাটার নামকরণ। চোখে পড়বে এদের তাঁতসহ উল বুনন কার্যক্রম। সুযোগ মিলবে অন্যতম সৌন্দর্য ইন্দোচীনের আদলে রাখাইনদের শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার দর্শনের। এ ছাড়া কুয়াকাটার অদূরে মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে সীমা বৌদ্ধবিহার। এ বিহারের মধ্যে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশাল আকৃতির বুদ্ধমূর্তি শোভা পাচ্ছে। রাখাইনদের মতে এটি এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি।

কুয়াকাটার নৈসর্গিক রূপ অন্যান্য সৈকতের চেয়ে বহুলাংশে আকর্ষণীয়। অবলোকন করা যাবে জেলেদের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি করা জীবন-জীবিকার যুদ্ধ। পরিচ্ছন্নতার জন্য রয়েছে কুয়াকাটার আলাদা পরিচিতি। সুন্দরের স্বকীয়তায় কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগরকন্যা। এ ছাড়া পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন পর্যটকরা। তাই প্রতিদিন শত শত পর্যটক-দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত থাকছে কুয়াকাটা।  বিশেষ ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে ধারণা করছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা। বেলাভূমির সর্বত্র হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠবে পর্যটকরা। নির্মল আনন্দ আর গভীর প্রশান্তি পেতে যারাই কুয়াকাটা আসবে তারাই পাবে প্রকৃতির সান্নিধ্য। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য শুধু মানুষকে মুগ্ধই করে না, ক্লান্তি-মনের জড়তা ঘুচিয়ে দেয়। তাই জীবনের আমুদে আর প্রশান্তির সময় কাটাতে ও মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করতে কুয়াকাটায় ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে এটিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর কুয়াকাটার নাম শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পর্যটক-দর্শনার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন সাগরকন্যা কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর