মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু ও কলকাতা বেকার হোস্টেল

ফখরে আলম

বঙ্গবন্ধু ও কলকাতা বেকার হোস্টেল

বাঁ থেকে বেকার হোস্টেলের স্মৃতি কক্ষে বঙ্গবন্ধু আবক্ষ মূর্তি, ডানে তার পড়ার চেয়ার টেবিল

কলকাতার ঐতিহাসিক বেকার হোস্টেল এক নামে সবাই চেনে। ভারতবর্ষের রাজনীতির অবিস্মরণীয় সব ইতিহাস বেকার হোস্টেলকে সমৃদ্ধ করেছে। সেই বেকার হোস্টেলকে আরও বেশি স্মরণীয়-বরণীয় করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বেকার হোস্টেলের তিনতলায় চোখে চশমা, মুজিবকোট পরিহিত শ্বেতপাথরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেকার হোস্টেলে নির্মাণ করেছে ছোটখাটো একটি জাদুঘর। বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য প্রতিদিনই কেউ না কেউ এখানে আসেন। বাংলাদেশের জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নেওয়ার পর বাবার কর্মস্থল মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল ও গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে লেখাপড়া করেছেন। এই কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানে লেখাপড়া করার সময় তিনি ৮ নম্বর স্মিথ লেন বেকার হোস্টেলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রজীবনের সেই কক্ষকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি কক্ষ’ নামে পরিচিত এই জাদুঘরটি দেখার জন্য এখন অনেকেই আসেন। চোখে চশমা আঁটা, মুজিবকোট পরা মার্বেল পাথরে তৈরি বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মন দিয়ে দেখেন বঙ্গবন্ধুর পড়ার চেয়ার-টেবিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে বর্তমান মাওলানা আজাদ কলেজ পূর্বতন ইসলামিয়া কলেজে লেখাপড়া করতেন। এ সময় তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এটি একটি ঐতিহাসিক কক্ষ। ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা বিভাগ এই কক্ষটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ হিসেবে সংরক্ষণ করে। ওই বছর ৩১ জুলাই উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্য সাধন চক্রবর্তী, আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ ড. সত্যব্রত ভট্টাচার্য, কলকাতার বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত শেখ আহমেদ জালাল স্মৃতি কক্ষের নামফলক উন্মোচন করেন।

এরপর এই কক্ষের প্রবেশ পথের মুখে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এই ভাস্কর্যের ফলক উন্মোচন করেন তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সরেজমিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, বেকার হোস্টেলের তিনতলার ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ দুটি এক করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ২৪ নম্বর কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পড়ার চেয়ার-টেবিল, একটি কাঠের আলমারি ও খাট। ২৩ নম্বর কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর একটি আলোকচিত্র আর বেশ কিছু বই-পুস্তক। স্মৃতি কক্ষ দেখতে আসা পর্যটক ও বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের বেকার হোস্টেলের কর্মী শেখ গোলাম গোওস সহযোগিতা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবনের গল্প শোনান। তিনি বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু ২৩ নম্বর রুমে লেখাপড়া করেছেন।

আর ২৪ নম্বর রুমে রাতে ঘুমিয়েছেন। পাশে বেকার হোস্টেলের পাঁচতলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটির নাম রাখা হবে বঙ্গবন্ধু ভবন।’ সরকারি এই বেকার হোস্টেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি কক্ষ দেখার জন্য বাংলাদেশ থেকে অনেকে এখানে আসেন। ভারতের লোকরাও আসেন। তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে চান। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করি। ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বেকার হোস্টেলে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি আবাসিক ছাত্র হিসেবে ছিলেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু অন্যতম। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। এ কারণে বেকার হোস্টেলে তার স্মৃতি ধরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক তার লেখাপড়া ও রাজনীতির স্মৃতিবিজড়িত বেকার হোস্টেলে চিরঞ্জীব হয়ে আছেন।’

সর্বশেষ খবর