মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বদলে যাবে দেশের জ্বালানি ভবিষ্যৎ

প্রতিদিন ডেস্ক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের জ্বালানি ভবিষ্যৎকে বদলে দেবে। পুরোদমে চলছে এর নির্মাণ কাজ। এটি ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে এটি তৈরি হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাশিয়ার রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ২০১০ সালের ২১ মে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক একটি ঋৎধসবড়িৎশ আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মস্কোতে। যার ফলশ্রুতিতে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে পাবনার রূপপুরে দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে সাত বছর। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মেয়াদকাল হবে ৬০ বছর ধরে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লিতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে-

ফুয়েল পেলেট: নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রথমটি হচ্ছে ফুয়েল পেলেট, যা অতি উচ্চ তাপমাত্রায় তার জ্বালানি বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে। ফুয়েল পেলেট সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়, ফলে তেজস্ক্রিয় ফিশন প্রোডাক্টগুলো পেলেটের ভিতরে অবস্থান করে।

ফুয়েল ক্ল্যাডিং: ফুয়েল পেলেটগুলো জিরকোনিয়াম অ্যালয়ের তৈরি ফুয়েল ক্ল্যাডিং দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। বিশেষ কোনো কারণে সামান্য পরিমাণ ফিশন প্রোডাক্ট ফুয়েল পেলেট থেকে বের হয়ে এলেও তা এ ক্ল্যাডিংয়ে ভেদ করতে পারবে না।

রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল: নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জন্য বিশেষ মাননিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পুরু ইস্পাতের প্রেশার ভেসেল তৈরি করা হয় যা, উচ্চ তেজস্ক্রিয় অবস্থাতেও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং: রিইনফোর্সড কনক্রিট দিয়ে ১.২ মিটার পুরুত্বের প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং তৈরি করা হয়, যা যে কোনো পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখে।

দ্বিতীয় কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং: নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকতর জোরদার করার জন্য আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টগুলোতে প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিংয়ের পর আরও ০.৫ মিটার পুরুত্বের আরও একটি কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং যুক্ত করা হয় যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিমান দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে প্লান্টকে সুরক্ষা করে। এ পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কারণে মনুষ্য সৃষ্ট ঘটনা/দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন- শাক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদিও প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম থাকবে এ পারমাণবিক চুল্লি।

এ পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এ প্লান্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও প্লান্ট নিরাপদ থাকবে। এছাড়া ৫.৭ টন পর্যন্ত ওজনের বিমানের আঘাতেও এটি অক্ষত থাকবে।

 

সর্বশেষ খবর